কেন্দুয়ায় দিগদাইর মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত হয়েছে সীরাত বিতর্ক প্রতিযোগিতা।

20250918_190717

মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন,ময়মনসিংহ বিভাগের বিশেষ রিপোর্টারঃ

শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ, যুক্তিবোধ জাগ্রত করা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার দিগদাইর মাদ্রাসায় আয়োজন করা হয়েছিল বার্ষিক সীরাত প্রতিযোগিতা।
আয়োজনে ছিলো বিভিন্ন ইভেন্টের পাশাপাশি এক মনোজ্ঞ বিতর্ক প্রতিযোগিতা, যা সমাপনী দিনের মূল আকর্ষণ হয়ে ওঠে প্রানবন্ত। বিতর্কের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছিল— “স্বৈরাচার রুখতে পি.আর. পদ্ধতি প্রধান উপায়।”

বিতর্কে অংশগ্রহণকারী মেধাবী শিক্ষার্থীরা পক্ষে ও বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করেন। পক্ষে থাকা বিতার্কিকরা জোর দিয়ে বলেন- পি.আর. বা Proportional Representation পদ্ধতি হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ভোটের অনুপাত অনুযায়ী সংসদে আসন ভাগ করা হয়।
এতে ছোট দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও সংসদে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পান। তাদের মতে- এ পদ্ধতির মাধ্যমে যে কোনো একক দলের একচ্ছত্র আধিপত্য কমে যায়, এবং জনগণের বহুমুখী মতামত রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রতিফলিত হয়। ফলে স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসে।

পক্ষে থাকা এক বিতার্কিক বলেন- “আমাদের দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অজুহাতে সংখ্যালঘু মতামত উপেক্ষিত হয়। কিন্তু পি.আর.পদ্ধতি থাকলে কেউ উপেক্ষিত থাকবে না এর মাধ্যমে প্রকৃত গণতন্ত্র নিশ্চিত হবে।”

অন্যদিকে বিপক্ষে থাকা বিতার্কিকরা তুলে ধরেন ভিন্ন চিত্র। তাদের মতে, পি.আর.পদ্ধতি আদর্শগতভাবে ভালো হলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা তৈরি হয়। এ পদ্ধতিতে সরকার গঠনের জন্য সাধারণত একাধিক দলের জোট প্রয়োজন হয়। জোট সরকার অনেক সময় অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং দেশ পরিচালনায় স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয়।

একজন বিপক্ষ বিতার্কিক বলেন- “স্বৈরাচার রুখতে শুধু নির্বাচনী পদ্ধতি পরিবর্তনই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা।” তারা আরও দাবি করেন,পি.আর. পদ্ধতি প্রবর্তন করলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টানাপোড়েন বৃদ্ধি পেতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রকে আরও দুর্বল করে দিতে পারে।

বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি প্রাণবন্ত ও বুদ্ধিদীপ্ত যুক্তি-প্রতিযুক্তিতে ভরে ওঠে। শ্রোতাদের করতালি ও উৎসাহ বক্তাদের অনুপ্রাণিত করে। একদিকে পক্ষে যুক্তি আসছিল পি.আর.পদ্ধতির মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার কথা, অন্যদিকে বিপক্ষে তুলে ধরা হচ্ছিল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার গুরুত্ব। ফলে প্রতিযোগিতা ছিলো সমৃদ্ধ ও শিক্ষণীয়।

বিতর্ক প্রতিযোগিতার সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মুফতী শফিকুল ইসলাম রাহমানি। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন- মুফতী আহমেদ কবীর খান ও মুফতী রেজাউল করিম।
দীর্ঘ যুক্তি-প্রতিযুক্তি পর্যালোচনা শেষে বিচারক মণ্ডলী পক্ষ দলকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
পাশাপাশি সেরা বক্তা নির্বাচিত হন মোঃ মুরসালীন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন- শিক্ষক, আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিক,কেন্দুয়া উপজেলা রিপোর্টাস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লাইমুন হোসেন ভুঁইয়া।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির বিজ্ঞান ও তথ্য বিষয়ক সম্পাদক, কেন্দুয়া উপজেলা জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরাম এর সভাপতি, সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন সালাম, উপজেলা রিপোর্টাস ক্লাবের সভাপতি, যুগান্তর পত্রিকার সাংবাদিক মামুনুর রশীদ মামুন, সাবেক সভাপতি, সাংবাদিক আবুল কাসেম, আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার সাংবাদিক, মানবাধিকার উপজেলা সভাপতি শাহ্ আলী তৌফিক রিপন, উপজেলা জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরাম এর সাংগঠনিক সম্পাদক, দৈনিক জাহান পত্রিকার সাংবাদিক আবদুল আউয়াল খান, কেন্দুয়া প্রতিদিনের সাংবাদিক সোহেল আকন্দ, সাংবাদিক মজিবুর রহমান, রুকন উদ্দিন প্রমুখ।

দিগদাইর মাদ্রাসার আয়োজকরা জানান- তরুণ প্রজন্মকে শুধু পাঠ্যবই নির্ভর শিক্ষায় সীমাবদ্ধ না রেখে, যুক্তিবাদী চিন্তা ও গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতেই এ ধরনের আয়োজন করা হয়।
তারা মনে করেন- স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রাম, গণতান্ত্রিক চর্চা এবং মুক্তচিন্তার বিকাশের জন্য বিতর্ক প্রতিযোগিতা অত্যন্ত কার্যকর মাধ্যম।

প্রতিযোগিতা শেষে হামদ ও নাত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। দিনভর নানা আয়োজনে মুখরিত দিকদাইর মাদ্রাসার প্রাঙ্গণ এই বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যেন নতুন প্রাণ পায়। শিক্ষার্থীদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ ও দর্শকদের উৎসাহ পুরো অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করে তোলে। সিরাত প্রতিযোগিতার সমাপনী দিনে আয়োজিত এ বিতর্ক শিক্ষার্থীদের শুধু মেধা বিকাশেই নয়, বরং গণতন্ত্র ও সমাজ পরিবর্তনের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার অনুপ্রেরণাও জাগিয়েছে।