কেন্দুয়ায় মানব পাচারের মামলায় চীনা নাগরিকসহ দুই আসামী কারাগারে

মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন , ময়মনসিংহ বিভাগের বিশেষ রিপোর্টারঃ
নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানায় দায়েরকৃত মানব পাচারের মামলায় চীনা নাগরিকসহ (দুই) ২জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলা কারাগারে প্রেরণ করেছে কেন্দুয়া থানা পুলিশ।
১৫ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকালে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা যায় থানা সূত্রে।
কেন্দুয়া পৌর সদরের সলপ কমলপুর গ্রামের ভুক্তভোগী গ্রামেন্টস কর্মী আলফা’র পিতা রুবেল বাদী হয়ে ৬জনের নামসহ আরও ৪/৫ জন অজ্ঞাত নামা ব্যাক্তিকে বিবাদী করে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগ আমলে নিয়ে ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় কেন্দুয়া থানায় এ বিষয়ে মামলা রজু করে আটককৃতদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নারী পাচারের এ ঘটনায় জড়িত অন্য আসামীদের গ্রেফতারের জোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা যায় । এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে কাজ করেছেন বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায় – মানবপাচার মামলায় কুড়িগ্রামের ফরিদুল ইসলামকে প্রধান আসামী করা হয়েছে।
এছাড়াও চীনা নাগরিক লিওয়েইহাও, লিমা, সুমাইয়া, চীনা নাগরিক ইলা, সাগরের নাম উল্লেখ্য করে আরও ৪/৫ জনকে অজ্ঞাতনামা রেখে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীসহ মোট ৫ জনকে স্বাক্ষী করা হয়েছে।
এজাহারে উল্লেখিত ঘটনার বিবরণে জানা যায়,কেন্দুয়া সলফ কমলপুরের রুবেল মিয়ার কন্যা আলফা আক্তারের সাথে একমাস পূর্বে গাজীপুর জেলার গাছা থানার মালেকের বাড়ী এলাকায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে তার বান্ধবী লিমার মাধ্যমে পরিচয় ঘটে কুড়িগ্রামের ফরিদুলের সাথে। পরিচয় হওয়ার পর থেকে ফরিদুল আলফাকে চীনা নাগরিকের সাথে বিয়ে দিয়ে চীনে পাঠানোর প্রস্তাব দিতে থাকে।
এক পর্যায়ে চীনা নাগরিক লি ওয়েইহাও এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে আলফা বিয়ের প্রস্তাবে রাজী হয়। পরে ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত একটি অজ্ঞাত অফিসে ফরিদুলের মাধ্যমে পরিচয় করিয়ে দেওয়া অপর একজন পুরুষ আলফাকে একটি চায়না ভাষায় ও ইংরেজি ভাষায় লিখিত কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে জানায় তাদের কোর্ট ম্যারেজ হয়েছে।
কথিত বিয়ের কার্যক্রম শেষে আলফার বান্ধবী লিজা ও বৃস্টি সহ ভাড়াটিয়া বাসা জিএমপি গাজীপুরের মালেকের বাড়ী এলাকা থেকে ভোগড়া বাইবাস এলাকার ভাড়াটিয়া বাসায় নজর বন্ধী করে রাখে। আলফাসহ তার বান্ধবীদের কারো সাথে যোগাযোগ না করতে হুমকি দেয়। এমনকি আশেপাশের লোকজনের সাথে কথা বলতেও নিষেধ করে।
পরে ১৪ সেপ্টেম্বর আলফার বান্ধবী জামালপুরের বৃস্টি আক্তারকে একই পক্রিয়াতে চীন নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ফরিদুল ও লিমা অপর একজন চীনা নাগরিকের সাথে একই কায়দায় কথিত বিয়ের সম্পন্ন করে। এর ১৫/২০ দিন আগে আলফা, বৃষ্টি ও লিজার কাছ থেকে তাদের ছবি, জন্মদিন,
ভোটার আইডি কার্ডসহ পাসফোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যায়।
গত ১২ সেপ্টেম্বর রুবেল তার কন্যার সাথে দেখা করতে গেলে তার মেয়ে তাকে বিয়ের কথা ও চীন যাওয়ার কথা বলে। তখন রুবেল তাদেরকে কেন্দুয়ার বাড়িতে আসার আমন্ত্রন জানিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসে।
এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত নয়টার দিকে চীনা নাগরিক লি ওয়েইহাও, কুড়িগ্রামের ফরিদুলসহ বৃস্টি, লিজা,আলফা রুবেলের কেন্দুয়ার বাড়িতে সলফ কমলপুর গ্রামে আসে। পরে রুবেল মিয়ার প্রতিবেশী আত্মীয় বিথী আক্তার রুবেলের বাড়িতে আসলে তাদের বিয়ের কাগজ
পত্র দেখতে চাইলে বিবাদীরা মোবাইল ফোনে একটি বিয়ের অঙ্গীকার নামা দেখারে সন্দেহ হয় এবং উপস্থিত লোকজনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।
পরে প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করার পর কেন্দুয়া থানা পুলিশ গিয়ে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে থানায় নিয়ে আসে। রুবেল মিয়ার ধারণা সকল বিবাদী গন পরস্পর যোগসাজশে সংঘবদ্ধ ভাবে তার মেয়ে আলফাকে ১৫ দিন আটকে রেখে চীনে পাচার করার পর পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার চেষ্টা করছিল।
ভুক্তভোগী আলফার পিতা রুবেল এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেছেন।