দলিলের বিপক্ষে যশোর সদর এসি ল্যান্ডের রিপোর্ট প্রদান, আদালতে নারাজি বাদীর

IMG-20250914-WA0034


বিশেষ প্রতিবেদক
যশোর সদর সহকারী কমিশনার ভূমির বিরুদ্ধে ভুক্তভুগি জমি মালিকরা অভিযোগ তুলেছেন। দলিলদির বিপক্ষে তিনি রিপোর্ট দিয়েছেন মর্মে এরা অভিযোগ করেছেন। আদতে রিপোর্টটি শহরের চিন্নিত ভূমিদস্যুদের পক্ষে প্রদান করা হয়েছে। মামলার বাদি ঐ রিপোর্টের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দিয়েছেন।
নালিসী জমিটির অবস্থান যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিম পাড়ায়। জমির বিবরণ: ৭৭নং চাঁচড়া মৌজা, সি এস ৬৪১, খতিয়ান ও এস এ ৬৬৭ খতিয়ানে সি এ দাগ ১৩৫, ১৩৬ এস এ দাগ ৫৫৩ জমি ৪৮ শতক, এস এ দাগ ৫৪১ জমি ২২ শতক।
সি আর ১১৩৯/২৩ এবং সি আর ১৪২৯ একই জমি সংক্রান্ত মামলায় এই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। মামলার প্রথমটির বাদি একই এলাকার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক। অপরটির বাদি পারভীন সুলতানা রুপা।
যশোর সদর সহকারী কমিশনার ভূমি নুসরাত ইয়াসমিন প্রদত্ত রিপোর্ট এ বলা হয়েছে, নান্নু মোহাম্মদের ছেলে ওয়ালী মোহাম্মদ। তিনি ইদু মোহাম্মদের ভ্রাতা হিসাবে ওয়ারেস প্রাপ্ত। তার মৃত্যুর পরে এক স্ত্রী, তিন পুত্র ও তিন কন্যা ওয়ারেস সূত্রে উক্ত জমি প্রাপ্ত। বাস্তবে ইদু মোহাম্মদের পিতা নান্নু নন।
নালিসী জমি বিবাদী পক্ষের দখলে আছে। তাদের পক্ষে আর এস রেকর্ড সম্পন্ন হয়েছে। উক্ত রেকর্ড সংশোধনের জন্য বাদি পক্ষ দে: ২৭১/১৬ এবং এলএস টি ৪৭/২৫ মামলা দায়ের করেছেন যা বিচারাধীন রয়েছে।
সহকারী কমিশনার বরাবর প্রদত্ত ফিরিস্তি ফরমে দেখা যায়, ১) সদর সহকারী জজ আদালতের দেওয়ানী চলমান মামলার ৯৩/১৬, ৮২/০৫. ২৭১/১৬ এর ফটোকপি ২) এস এ খতিয়ান ৬৬৭ এর ফটোকপি ৩) বায়া দলিলের দুইটা ফটোকপি ৪) সাধারন আমমোক্তার নামার ১ সেট ফটোকপি ৫) ওয়ারিশ সনদের ফটোকপি ১টি ৬) মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট ফটোকপি ১টি ৭) ভোটার আড কর্ডের ফটোকপি ৩টি ৮) বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট আদালতের ফটোকপি ১টি ৯) বিগত আমলের নামজারী কেস নং-৩৪২৯-১/৮২-৮৩ এর ফটোকপি ১টি। ১০) মিস আপীল ৩৩/৯-৩/২০২১-২২ এর আদেশ পত্রে ফটোকপি ১টি ১১) নামজারী কেস নং-৫২৫/৯-১/২০১৪-১৫ এর বাতিল কৃত ফটোকপি ১ সেট ১২) নুর উদ্দীনের খাজনার রশিদ এর ফটো কপি ১টি ১ হইতে ৫১ ফর্দ আছে। এখানে স্বাক্ষর করেছেন রাজ্জাক। ডকেট নম্বর ১১৪৩, তারিখ: ২৪/০৩/২৪।
দলিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়,
১৯৬৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ইদু মিয়ার কাছ থেকে ঢাকা আরমানিতলার শামিম আহমাদের কন্যা নার্গিস আকতার এই জমির ক্রেতা গ্রহীতা। দলিল রয়েছে।
এরপর নার্গিস আকতারের কাছ থেকে মোহাম্মদ মহি উদ্দিন মাস্টারের ছেলে মোহাম্মদ নূর উদ্দিন জমিটি ক্রয় করেন। দলিল নম্বর ৬১১৯। ৭/১২/৮২ তারিখে এটি রেজিস্ট্রি হয়।
বিক্রীত জমি কিভাবে ওয়ারেস পাবে তা কারো বোধগম্য নয়। আর তাছাড়া যাকে এই ওয়ালী মোহাম্মদ দাবি করা হচ্ছে সে এই জমি মালিকদের কেউ নয়। প্রকৃত সত্য এই এই ওয়ালী মোহাম্মদ ইদু মোহাম্মদের কেউ নন। ইদু মোহাম্মদ হলেন লালু মাস্টারের ছেলে। ইদু মোহাম্মদের ছেলের নাম ছিল লালু মোহাম্মদ। তাকে জেলার ডাক নামে ডাকা হোত। সে ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশ স্বাধীনের আগেই পাকিস্তান চলে গেছে বলে রেলগেট এলাকার প্রবীণ ব্যাক্তিরা দাবি করেন। এই জেলারের এক চোখ কানা ছিল। সে মহিষের পিঠে রেলগেট এলাকায় ঘুরে বেড়াতো।
দুধওয়ালা কালুর চার ছেলে বাবু মোহাম্মদ, নূর মোহাম্মদ, শের মোহাম্মদ এবং অভিযুক্ত এই বিবাদীদের পিতা ওয়ালী মোহাম্মদ। এদের সন্তান নাতি পুতি এখনো বেজপাড়া নাজিরশঙ্কর পুর এলাকায় বসবাস করেন। ওয়ালী মোহাম্মদের ছেলে মেয়েরাই কেবল রেলগেট এলাকায় বসবাস করে। স্থানীয়রা বলেন, ডিএনএ টেস্ট করলেই মিথ্যা ওয়ারেস কায়েম সনদটির প্রকৃত সত্য প্রকাশ হবে। আর এই ওয়ালী মোহাম্মদ মূলত অলি মোহাম্মদ নামে পরিচিত। যিনি ইদু মোহাম্মদের মহিষের খাটালে মায়েন্দার ছিলেন। পরে কাজ ছেড়ে দিয়ে আবিদ বিহারীর বরিশাল রুটের বাসের হেলপার হয়েছিলেন। অর্থাৎ মামলার বিবাদীরা আদতে ইঁদু মোহাম্মদের কেউ নয়। তাছাড়া ইদু মোহাম্মদের পিতা নান্নু নন। যা আগেই বলা হয়েছে।
এরা চার ভাই এক বোন ছিলেন। বোনটি পাকিস্তান চলে যান। তার বিস্তারিত পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, বিবাদীদের সাতটি জাল রেকর্ড যথাযথ কতৃপক্ষ বাতিল করেছেন। নূর উদ্দিন বাটা ম্যানেজার ছিলেন। তার স্ত্রী, ছেলে ও দুই মেয়ে। তার ওয়ারেসরা যথাযথ। স্বাক্ষ প্রমানে সেটা প্রমান হয়েছে।
উল্লেখিত নালিসী জমি ক্রয় বিক্রয় পাঁচটি দলিলের হদিস মিলেছে। এর মধ্যে নার্গিস আখতার ইদু মিয়া র কাছ থেকে ২২ শতক জমি ক্রয় করেন। দলিল নং ১০৮১ তারিখ ২৩/০১/১৯৬৯।
কেফাতুল্লা পাঁচ শতক জমি ক্রয় করেন ইদু মিয়ার কাছ থেকে। দলিল নং ৬৫৫৫। তারিখ ১০/০৬/১৯৬৯।
বাদি আব্দুর রাজ্জাক জানান, জমি ক্রয়ের গত ২৪ মার্চ ৫১ ফর্দ কাগজ জমা দিই। যার অফিস গ্রহণের ডকেট নম্বর ১১২৮। এর পরেও বিপক্ষে রিপোর্ট দিয়েছেন এসি ল্যান্ড ম্যাডাম। কেন তা বলতে পারবো না। গত ১১ সেপ্টেম্বর সংলিস্ট আদালতে নারাজি দিয়েছি।
এসি ল্যান্ড যশোর সদর অফিস থেকে জানানো হয়েছে আব্দুর রাজ্জাক গঙ সকল কাগজ পত্র সরবরাহ করেনি। হাতে পাওয়া কাগজ পত্র অনুযায়ী রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে।