মদনে সালিশির নামে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি: টাকা না দেওয়ায় হামলা-ভাঙচুরে আহত ৫০, রণক্ষেত্র পুরো গ্রাম

Screenshot_2025_0913_221312

সাত বছর আগের হত্যাকাণ্ডের আপোষ মীমাংসা করতে গিয়ে সংঘর্ষ | ইউপি সদস্যসহ ফারুকমিয়া ও ছালিমদদীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ | নারীসহ আহত অন্তত ৫০ | ভাঙচুর ২৫টি ঘরবাড়িতে

মোঃ রাসেল আহমেদ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি

নেত্রকোনা:
নেত্রকোনার মদন উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নের আলমশ্রী গ্রামে সালিশির নামে চাঁদাবাজির ঘটনায় ভয়াবহ সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছে। একটি পুরনো হত্যা মামলার আপোষ মীমাংসা করতে গিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে নারীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। মারামারিতে ২৫টিরও বেশি ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয়েছে।

সংঘর্ষের সময় দুই পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলায় জড়ায়, যার ফলে গ্রামটি রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আহতদের মধ্যে ৮ জনকে গুরুতর অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার পেছনে সাত বছরের পুরনো হত্যাকাণ্ড

স্থানীয়দের তথ্যমতে, সাত বছর আগে আলমশ্রী গ্রামের জিলদার মিয়ার ছেলে বিভেক এক সংঘর্ষে নিহত হন। এ ঘটনায় বাদীপক্ষ আদালতে ৭৮ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলাটি এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে বিচারাধীন।

সম্প্রতি স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মাতব্বর ও ইউপি সদস্যরা ওই মামলার আপোষ মীমাংসার উদ্যোগ নেন। দেড় মাস আগে এক সালিশি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়—আসামিপক্ষ ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে মামলা আপোষ করবে। পাঁচটি গোত্রের মধ্যে ইউপি সদস্য ফারুক মিয়া এতে সম্মত হন, তবে বিল্লাল মিয়া নামের অপর এক গোত্র প্রধান সেই সিদ্ধান্তে রাজি হননি।

সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা

বিল্লাল মিয়া পক্ষের আপত্তির পর শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে যাঁরা গুরুতর আহত হয়েছেন:

শহীদ (৪০), পিতা: লতিফ মিয়া

সালেহীন (২৫), পিতা: কাসেম আলী

অলি (৩০), পিতা: হাসু মিয়া

আছিয়া আক্তার (৬০), স্ত্রী: কাছম আলী

কাসেম (৩২), পিতা: মারফত আলী

তারু (৬০), পিতা: মইজুদ্দিন

সম্রাট (৩০), পিতা: আব্দুল

এছাড়া প্রায় ৫০ জন স্থানীয় বাসিন্দা আহত হন। অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও গ্রামীণ চিকিৎসকদের কাছে।

পক্ষগুলোর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

ইউপি সদস্য ও প্রধান আসামি ফারুক মিয়া বলেন:

“আমি এই মামলার প্রধান আসামি। স্থানীয় গণ্যমান্যরা আমাদের ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে বলেন। আমি চেষ্টা করেছি সব গোত্রকে এক করে তা দিতে। কিন্তু বিল্লাল মিয়া ও কামরুল তা মানতে চাননি। সংঘর্ষের সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না।”

বিল্লাল মিয়া বলেন:

“আমরা টাকা এক জায়গায় জমা রেখেছিলাম। কিন্তু ফারুক মেম্বারকে না দিয়ে সরাসরি নিহতের পরিবারকে দিতে চেয়েছিলাম। এ নিয়েই তারা আমাদের উপর হামলা চালায়। আমাদের ২৫টি ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে লুটপাট করে।”

সালিশির নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ

একজন সালিশি মাতুব্বর নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,

“সালিশিতে দুই পক্ষকে নিয়ে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে আপোষের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু কিছু পক্ষ সিদ্ধান্ত বদলায়।”

স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি—এটি একটি স্পষ্ট ‘সালিশির নামে চাঁদাবাজির ঘটনা’। আদালতে বিচারাধীন মামলা নিয়ে সালিশে টাকা চাপিয়ে দেওয়া আইনের চরম অপমান এবং সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে।

পুলিশের অবস্থান

মদন থানার ওসি মোঃ শামসুল আলম শাহ্ বলেন,

“আলমশ্রী গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”