মায়ের সম্পত্তি আত্মসাৎ করে মেয়ে; অসুস্থ বৃদ্ধার মানবাধিকারে আইনী সহায়তার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক,
ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অধীন খোলামোড়া গ্রামে ঘটেছে চাঞ্চল্যকর এক প্রতারণার অভিযোগ। অসুস্থ বৃদ্ধা রিজিয়া বেগম (৬০) তাঁর নিজের মেয়েদের বিরুদ্ধে সম্পত্তি আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ এনে আইনী সহায়তার আবেদন করেছেন “হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি”-র চেয়ারম্যান বরাবর।
রিজিয়া বেগম জানান, তাঁর নামে হোল্ডিং নং ৩২১৯-এর অধীনে খোলামোড়া গ্রামে ২.৫ কাঠা জমি ও একটি পাকা বসতবাড়ি ছিল, যা তিনি বহু কষ্টে অর্জন করেন। তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জননী। কয়েক বছর আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর বড় মেয়ে নুরুন্নাহার তাকে চিকিৎসা সেবার নামে বিভিন্ন কাগজে সই নেয়। পরে জানা যায়, ওই কৌশলে বড় মেয়ে ও প্রবাসী ছোট মেয়ে ইয়াসমিনের নামে সম্পত্তি লিখে নিয়েছেন, যদিও ছোট মেয়ে দীর্ঘ ১১ বছর যাবত দুবাইয়ে অবস্থান করছেন এবং এ বিষয়ে কিছু জানতেন না।
এছাড়াও, চিকিৎসার নামে বড় ছেলে ইয়ার হোসেনের কাছ থেকে সাত ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন নুরুন্নাহার। যা এখনও ফেরত দেওয়া হয়নি। বর্তমানে রিজিয়া বেগম অসুস্থ অবস্থায় বড় ছেলে ইয়ার হোসেনের ওপর নির্ভরশীল, যিনি নিজের সংসারের খরচ চালিয়ে মায়ের চিকিৎসা ও ভরণপোষণের খরচ বহনে হিমশিম খাচ্ছেন।
রিজিয়া বেগম বলেন, আমি যদি বাড়িটার ভাড়া বা গহনা ফেরত পাই, তাহলে আমার চিকিৎসা ও খরচে কষ্ট হতো না। এখন ভরণপোষণের জন্য একমাত্র ছেলের ওপর নির্ভরশীল, সে নিজেও পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, যখন বাড়ির মালিকানা ও গহনা ফেরত চাইতে যান, তখন বড় মেয়ে তাঁকে হুমকি দেন। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে এতদিন কিছুই করতে পারেননি। বর্তমানে আইনের শাসনের প্রতি আস্থা রেখে সুবিচার কামনায় আইনী আশ্রয় চেয়েছেন।
হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী এডভোকেট সাঈদুল হক সাঈদ বলেন, বাংলাদেশ দণ্ডবিধি (Penal Code, 1860) অনুযায়ী—
ধারা ৪২০: প্রতারণা করে সম্পত্তি আত্মসাৎ – সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। ধারা ৪০৬: গচ্ছিত সম্পত্তি আত্মসাৎ – শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ধারা ৫০৬: হুমকি প্রদান – ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য দণ্ডনীয়। Guardian and Wards Act, 1890: অসুস্থ বা বৃদ্ধ ব্যক্তির অভিভাবকত্ব ও সম্পত্তি রক্ষার আইনগত বিধান।
হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটির চেয়ারম্যান জনাব মোঃ সাঈদুল হক সাঈদ বলেন, এ ধরনের পারিবারিক প্রতারণা আমাদের সমাজে বৃদ্ধ ও অসহায় মানুষদের প্রতি চরম অবহেলার প্রমাণ। একজন মা যিনি সন্তানের জন্য নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় উৎসর্গ করেছেন, তাঁকে এমনভাবে প্রতারিত হতে দেখা অত্যন্ত মর্মান্তিক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে আইনগত সহায়তা প্রদান করবো এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় দ্রুত বিচার নিশ্চিতের চেষ্টা করবো। মানবাধিকার ও ন্যায়ের স্বার্থে আমরা এই বৃদ্ধা মায়ের পাশে আছি।”
রিজিয়া বেগমের অভিযোগ একটি দুঃখজনক পারিবারিক বাস্তবতার দৃষ্টান্ত। মানবিক ও আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে এ ধরনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হওয়া প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ মাকে বা কোনো প্রান্তিক মানুষকে ঠকাতে সাহস না পায়।