মন-মানসিকতা থাকলেই ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারের পাশাপা‌শি অন‌্য পেশায় থে‌কে ও মানুষের সেবায় কাজ করা সম্ভব : তথ্য কমিশন সচিব হাওলাদার রকিবুল বারি


মো. আমিরুল ইসলাম :
আমাদের দেশে সাধারণত মানবিক ও গনমানুষের সেবা বলতে সাধারণত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের সেবাকেই বোঝানো হয়ে থাকে। গ্রাম-বাংলার প্রতিটি অভিবাবকও তাদের সন্তানদেরকেও সেবাই গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন। যে কারনে প্রতিটি ছেলে-মেয়ে ছোট বেলা থেকেই ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু এসবের বাইরে অন্যান্য পেশায়ও যে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠলে অসহায়, দু:স্থ্য ও সাধারণ মানুষের সেবায় বিশেষ ভুমিকা রাখা যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তথ্য কমিশন সচিব হাওলাদার রকিবুল বারি। তিনি মনে করেন, গনমানুষকে সেবা করা ও মানুষের সেবায় কাজ করতে চাইলে কাজ করার একটা মন থাকতে হবে, একই সাথে কাজ করার মানষিকতা তৈরী করতে হবে, তবেই যে কোন মানুষকে সেবা করা সম্ভব। সেজন্য ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে এমন ধারণাটিও সঠিক নয়। ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারের পাশাপা‌শি অন‌্য পেশায় থে‌কে ও মানুষের সেবায় সঠিকভাবে আত্ননিয়োগ করা যায় সে বিষয়টিই এ প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তুলে ধরেন তিনি।
হাওলাদার রকিবুল বারি বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বাজুয়া গ্রামে ১৯৬৯ সালের ৩১ জানুয়ারি জন্ম গ্রহন করেন। পিতা মরহুম মনসুর আলী হাওলাদার ও মাতা লতিফা বেগম দম্পতির ছয় সন্তানের (চার ছেলে দুই মেয়ে) সকলের বড় হাওলাদার রকিবুল বারি। ছোট বোন ফাতেমা তুজ জোহরা রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন, তার বড় বোন জা‌কিয়া বা‌রি মম এক‌টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
বিসিএস ১১তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হাওলাদার রকিবুল বারির শিক্ষা জীবন শুরু গ্রামের স্কুলেই। বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের আফরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে ফকিরহাটের মূলঘর সরকারি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। বাগেরহাট সরকারি প্রফুল্ল চন্দ্র রায়(পিসি) কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাশ করেন। পরে খুলনার সরকারি ব্রজলাল(বি.এল) কলেজ থেকে বিএসএস ও বাংলা ভাষা সাহিত্যে তিনি এম.এ. পাস করেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি অত্যন্ত সদালাপী ও বন্ধু বাৎসল্য। সংসার জীবনে তিনি এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তার পুত্র এইচ.এম ইব্রাহিম হামিম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসী মীম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সোসিওলজিতে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। তার সহধর্মীনী মাহবুবা বারী গৃহিণী হলেও সব সময়ই তার প্রেরণাদাতা হিসেবে রয়েছেন।
হাওলাদার রকিবুল বারি একান্ত আলাপচারিতায় বলেন, ছোট বেলায় স্কুল-কলেজে পড়ার সময় আমরা ভবিষ্যতে কি হতে চাই এমন প্রশ্নের উত্তরে সব ছাত্র-ছাত্রীরা বুঝে হোক আর না বুঝে হোক ভবিষ্যতের স্বপ্ন হিসেবে শুধু ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারি হতে চাই এমনটাই লিখতাম। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারের পাশাপাশি অন্যান্য পেশায় থেকেও যে মানুষের সেবা করা যায় সেটা এখন বাস্তব জীবনে উপলব্ধি করেছি। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে ১৯৯৩ সালের ০১ এপ্রিল সহকারি কমিশনার হিসেবে চাকরিতে যোগদানের পরে বাস্তব অভিজ্ঞতায়ে সেটাই অর্জিত হয়েছে। কর্মজীবনে প্রথমে সহকারি কমিশনার (ভূমি) হিসেবে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায়, পটুয়াখালী সদর ও দশমিনা উপজেলা, ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা এবং ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলায় সততা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। নড়াইল জেলার এ,ডি,সি ও পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক, খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে ফরিদপুর ও পটুয়াখালীতে দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর পরিচালক বিকেএসপি, পরিচালক মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং পরিচালক বিটিএমসি পদে সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। এ সকল কর্মস্থলে কাজ করতে গিয়ে আমি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের সুবিধা, অসুবিধা ভালো মন্দ ও তাদের জীবনমান ইত্যাদি বিষয়ে খোজ খবর নেওয়ার বা জানার সুযোগ পেয়েছি। মানুষের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনে তাদের যথাযথ সেবা প্রদান ও সমস্যার সমাধান করতে পারার মাঝে কর্মের স্বার্থকতা খুজে পেয়েছি। মানুষ যখন কোন বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে প্রচন্ড মন খারাপ করে ভরাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আমার নিকট আসেন এবং সমস্যা সমাধানের পরে হাস্যজ্জলভাবে বিদায় নেন তখন মনে হয় আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও চেয়ারের মর্যাদা রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি জীবন এভাবে মানুষের সেবায় কাজ করে যেতে চাই।
গ্রামে বেড়ে ওঠা ও শিক্ষা জীবনের বিষয়ে রকিবুল বারি বলেন, গ্রাম আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি। শহরের অত্যাধুনিক জীবনের মাঝে থেকেও গ্রামের প্রকৃতি সব সময় আমাকে কাছে টানে ও মুগ্ধ করে। তাছাড়া আমি খুবই সাদামাঠা জীবন যাপন পছন্দ করি। দেখুন প্রতিটি মানুষের জীবনের একটা লক্ষ্য ও উদ্যেশ্য থাকে, তার ভিত্তিতেই আমি বলেছি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার না হয়েও মানুষের সেবা করা যায়। দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি। এখন ১ম গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছি। আমার পড়ালেখা বেড়ে ওঠা শৈশব-কৈশর সবই কিন্তু গ্রামেই কেটেছে। কর্ম জীবনেও গ্রামাঞ্চলে অনেক সময় দায়িত্ব পালন করেছি। যদিও প্রযুক্তিগত এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে গ্রাম ও শহরের পার্থক্য এখন অনেক হ্রাস পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ সরকারী চাকুরী কোন ক্ষেত্রে এখন আর গ্রামের ছেলে-মেয়েরা পিছিয়ে নেই।
সম্প্রতি বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের পরিচালক অতিরিক্ত সচিব হাওলাদার মো. রকিবুল বারীকে তথ্য কমিশনের সচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গত(২৭ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ০৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ০৫ সেপ্টেম্বর প্রধান তথ্য কমিশনার আবদুল মালেক ও তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুক পদত্যাগ করেন। এরপর ২০জানুয়ারি তথ্য কমিশনার মাসুদা ভাট্টিকে অপসারণ করে সরকার। ০৩ সেপ্টেম্বর তথ্য কমিশনের সচিব জুবাইদা নাসরীনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে সরকার। পরে একজন অতিরিক্ত সচিবকে তথ্য কমিশনের সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ডিসেম্বরে অবসরে যান তিনি। এরপর বেশ কিছু দিন তথ্য কমিশনের সচিবের পদটি শূণ্য ছিল। পরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব(টিভি-১) মো. ইব্রাহিম ভূঞাকে তথ্য কমিশনের সচিবের রুটিন দায়িত্ব দেয়া হয়।
হাওলাদার মো. রকিবুল বারী তথ্য কমিশনের সচিব হিসেবে নতুন কর্মস্থলে গনমানুষের সেবায় অতীতের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। ##

You may have missed