বাবার মৃত্যুর পর বসত বাড়িতে দাফন-কাফন করতে দেয়নি।হত্যা ঘটনার জেরে দশ বছর ধরে ভিটে ছাড়া পাঁচ পরিবার।
মো: লুৎফুর রহমান হৃদয় বিশেষ প্রতিনিধি ময়মনসিংহ বিভাগ
জমি সংক্রান্ত বিরোধে দুলাল হত্যা ঘটনার জের ধরে আসামী পক্ষের বসতবাড়ীতে হামলা, ভাংচুর ও ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটে। আদালতে হত্যা মামলাটি বিচারাধীন থাকলেও দশ বছর ধরে পাঁচটি পরিবারের সদস্যরা ভিটে ছাড়া হয়ে যাযাবরের মতো দিন যাপন করছেন। ঘটনাটি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের দুরচাপুর গ্রামের। এ ঘটনায় আসামীপক্ষের জুলহাস খানের ছেলে উবায়দুল খা তাদের বসতবাড়ীতে বসবাসের জন্য আইনগত সহায়তা চেয়ে গত ১৬ অক্টোবর কেন্দুয়া থানা ওসি, সেনা ক্যাম্প কমান্ডার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।
জানা যায়, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে ও বসতবাড়ী থেকে সুপারি পারার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুরচাপুর গ্রামের জুলহাস খানের ছেলেদের সাথে প্রতিবেশী মুনসুর আলী খার ছেলেদের ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর ঝগড়া হয়। এতে মুনসুর আলী খার ছেলে দুলাল খা আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
এ ঘটনায় মুনসুর আলী খার ছেলে এমদাদুল হক খা বাদী হয়ে জুলহাস খার ছেলে উবায়দুল খা সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর কেন্দুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই হত্যা ঘটনার জের ধরে ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর মামলার আসামীরা জেলহাজতে ও পলাতক থাকার সুযোগে মামলার বাদী পক্ষের লোকজন বসতবাড়ীতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করে। এতে হারিছ খানের দুটি আধা পাকা ঘর ও আরশ খানের একটি আধা পাকা ঘর এবং জুলহাস খা, উবায়দুল খা ও আলম খানের ৪টি টিনের ঘর ভাংচুরসহ অন্যান্য আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এতে ৫টি পরিবারের প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে তারা দাবি করেন।
এ ঘটনায় উবায়দুল হক বাদি হয়ে আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করলে আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে কেন্দুয়া থানা ওসিকে এফআইআর হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দেন। কেন্দুয়া থানা পুলিশ তদন্ত করে ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারী ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি চার্জসিট দাখিল করেন। পুলিশ বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় উবায়দুল খা দের ৬২ লাখ ২৯ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করেন। দুলাল হত্যা মামলার প্রধান আসামী উবায়দুল খা অভিযোগ করে বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধে সংঘর্ষ হলেও আহত দুলাল খা ডায়াবেটিসসহ নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা যান। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে সাজানো একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
মামলাটি আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আছে কিন্তু হত্যার জের ধরে আমাদের বসতবাড়ীতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট করে বসতবাড়ীতে আমাদের রাখা ইট, সুকরি ও বালি দিয়ে তারা দেয়াল নির্মাণ করে রেখেছে। আমাদেরকে ভিটে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে ১০ বছর ধরে আমাদের বসতবাড়ীতে বসবাস করতে দেয়নি।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আমার বাবা জুলহাস খান মারা যায়। কিন্তু দুলাল খা হত্যা মামলার বাদী পক্ষের লোকজন আমার বাবাকে আমাদের বসতবাড়ীতে দাফন-কাফন পর্যন্ত করতে দেয়নি। পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর প্রতিবেশী চাচা হারিছ খানের বাড়িতে বাবাকে দাফন কাফন করা হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার সরেজমিন গেলে দুলাল হত্যা মামলার বাদী পক্ষের উমর ফারুক ও তার ভাই মাহাবুব জানান, উবায়দুল হকের বাবা জুলহাস খাকে আমার দাদা বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তারা জমিজমা বিক্রি করে ভূমিহীন অবস্থায় ছিলেন। পরবর্তীতে তাদের মাধ্যমে আমার ভাই দুলাল খা হত্যার পর আমাদের ও গ্রামের লোক জন উত্তেজিত হয়ে তাদের বসতবাড়ী ভাংচুর ও লুটপাট করে। মূলত তাদের এখানে কোন বৈধ ভিটেবাড়ি না থাকায় তাদের ঘর দরজা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। উমর ফারুক বলেন, যাদেরকে বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল তারাই আমার ভাই দুলাল খা কে হত্যা করে। এখন কি করে আর তাদেরকে বিশ্বাস করে বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া যায়?
অভিযোগের প্রেক্ষিতে কেন্দুয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিউল আলম জানান, জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষের আঘাতে দুলাল খা আহত হয়ে হাসপাতালে নিহত হয়েছেন। এরই জের ধরে মামলার বাদী পক্ষের লোকেরা উবায়দুল খা দের বাড়ীঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। উবায়দুল খা দের বৈধ কাগজপত্র যাচাই করে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবেন আদালত। হত্যা ঘটনার পর থেকে উবায়দুলদের ৫টি পরিবার বাড়ি ছাড়া। এ অভিযোগটি পেয়েছি এবং অভিযোগটির তদন্ত চলছে।