বগুড়ায় আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস পালিত

মোঃ খাত্তাব হোসেন বগুড়া প্রতিনিধি:
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠন তীর-এর উদ্যোগে আজ পালিত হলো আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে কলেজ প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
শকুন সংরক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বন বিভাগসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন যৌথভাবে কাজ করছে। তারা বিপন্ন শকুন উদ্ধার, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে বিলুপ্তির হাত থেকে এ পাখিকে রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে শকুন বিলুপ্তির প্রধান কারণ হিসেবে পশু চিকিৎসায় ব্যবহৃত ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন ওষুধকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মৃত পশুর দেহে এসব ওষুধ থাকলে তা খেয়ে শকুনের কিডনি নষ্ট হয়ে মাত্র ২-৩ দিনের মধ্যে মৃত্যু ঘটে। গবেষণা অনুযায়ী, গত তিন দশকে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ৭৫% শকুন হারিয়ে গেছে। ১৯৮০-এর দশকে সার্কভুক্ত দেশে প্রায় ৪ কোটি শকুন থাকলেও বর্তমানে সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ৪০ হাজারে।
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ অব ভেটেরিনারি মেডিসিন-এর গবেষক ড. লিন্ডসে ওক প্রমাণ করেন যে, ডাইক্লোফেনাক শকুন মৃত্যুর অন্যতম কারণ। ভারতে প্রতিবছর প্রায় ৩০% শকুন এই কারণে মারা যায়। তাই পৃথিবীর অনেক দেশেই শকুন-বান্ধব বিকল্প ওষুধ মেলোক্সিক্যাম ব্যবহার করা হচ্ছে।
তীরের উপদেষ্টা মোঃ শাহজাহান আলী বলেন, “শকুনকে প্রকৃতির ঝাড়ুদ্বার বলা হয়। এই বৃহদাকার পাখি মৃত প্রাণী ভক্ষণ করে অ্যানথ্রাক্স, যক্ষ্মা, ক্ষুরারোগসহ মারাত্মক সংক্রমণ থেকে জীবকুলকে রক্ষা করে।”
তীরের সভাপতি আশা মনি জানান, বন বিভাগের তথ্যানুযায়ী স্বাধীনতার পূর্বে দেশে প্রায় ৫০ হাজার শকুন ছিল। কিন্তু বন বিভাগ ও আইইউসিএন-এর ২০২৩ সালের শুমারিতে মাত্র ২৬৭টি শকুনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
অনুষ্ঠানে কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, তীরের উপদেষ্টা মণ্ডলীসহ সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠন টিম ফর এনার্জি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ (তীর) ২০১১ সাল থেকে জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ করছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে সংগঠনটি জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়।