ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের সুবিধাভোগী নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বেলাল ভূঁঞা অনিয়ম-র্দূনীতিতে গড়েছেন কোটি টাকার সম্পদের পাহাড়, তদন্ত র্পূবক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী

মো. আমিরুল ইসলাম :
বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী রাজধানীর নিউ মডেল ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ বেলাল ভূঁঞা অনিয়ম-র্দূনীতিতে রের্কড গড়েছেন। বিগত সরকারের আমলে আইন অমান্য করে আওয়ামীলীগের পদ-পদবী গ্রহনসহ চরম দূনীতি আর অবৈধভাবে সুবিধা নিয়ে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। গত বছরের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থান পরবর্তীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হলেও তার কোন ছোয়া লাগেনি নিউ মডেল ডিগ্রী কলেজে। এখনও স্বপদে আছেন বহাল তবিয়তে রয়েছেন র্দূনীতির মহারাজা অধ্যক্ষ বেলাল ভূঁঞা। ক্ষমতার অপব্যবহার করার নীল নকশা মাথায় রেখে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুর্নীতির মহারাজা শেখ ফজলে নূর তাপসের সহধর্মীনিকে মেয়ে আখ্যা দিয়ে তিনি হয়ে যান তাপসের শ্বশুর। এই সুযোগে সকল প্রকার অনিয়ম-র্দূনীতি তিনি হাতিয়েছেন অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা। সরকারি চাকরিজীবীরা কোন রাজনৈতিক দলের পথ পদবীতে যুক্ত থাকার বিধান না থাকলেও সেই বিধানকে বুড়ো আঙ্গুলে দেখিয়ে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি নিউ মডেল ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিলাল ভূঁইয়া দীর্ঘদিন কলাবাগান থানাধীন সোবানবাগ-শুক্রাবাদ ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দাপটের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। পট পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তন করেছেন বহুরূপী অধ্যক্ষ বেলাল। এখন তিনি তেল দিচ্ছেন ক্ষমতাসীনদের মাথায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শুক্রাবাদ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত নিউ মডেল ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবিএম বেলাল হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে নানা আর্থিক অনিয়মের তথ্য প্রমাণ নিয়ে কলেজটি পরিদর্শন করেন শিক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ। সরেজমিন তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিললেও কর্তৃপক্ষ এখনো পর্যন্ত নেয়নি কোন পদক্ষেপ। মেয়র তাপসের তদবিরে ধামাচাপা পড়ে যায় সব দুর্নীতির দায়। স¦পদে নির্দ্বিধায় বহাল থেকে যায় প্রায় চার কোটি টাকা অবৈধভাবে আত্মসাৎ সহ নানা অপকর্মের মূল হোতা এবিএম বেলাল হোসেন ভূঁঞা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, নিউ মডেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবিএম বেলাল হোসেন সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়ায় পদ না থাকার পরেও উপাধ্যক্ষ-২ পদে অবৈধভাবে নিয়োগ গ্রহণ করেন। একই সময়ে তিনি নিয়েছেন সহকারী অধ্যাপক ও উপাধ্যক্ষ দুই পদের বেতন-ভাতা। কলেজ থেকে নিয়েছেন সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা । এই অন্যায়ের কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে বা কেউ বাধা দিলে শক্ত হাতে দমন করেছেন ধরেছেন টুটি চেপে। কারণ মেয়র তাপস তার মেয়ের জামাই দোহাই দিয়ে এসব কুকাম করেছেন।
সূত্র জানায়, নিউ মডেল ডিগ্রী কলেজের সরকারি অধ্যাপক এবিএম বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়া অবৈধ প্রক্রিয়া উপাধ্যক্ষ-২ পদে নিয়োগ লাভ করে। তিনি ২০১০ সালের সহকারী অধ্যাপক পদে থাকাকালীন অবৈধ প্রক্রিয়ায় উপাধ্যক্ষ-২ পদে যোগদান করেন। ছাত্র-ছাত্রীর হার অনুযায়ী এক শিফটের ডিগ্রি কলেজে একটি উপাধ্যক্ষের পদ থাকবে। এছাড়া একজন শিক্ষক একাধিক আর্থিক লাভজনক পদে থাকতে পারবেন না। কিন্তু অধ্যক্ষ বেলাল হোসেন উপাধ্যক্ষ-২ পদে যোগদানের পর সহকারী অধ্যাপকের পদ থেকে অব্যাহতি নেননি। ০১ জানুয়ারি ২০১১ তারিখের সভায় উপাধ্যক্ষ পদে এবিএম বেলাল হোসেনের নিয়োগ স্থগিত করা হলেও ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখের সভায় ৬ নং সিদ্ধান্তে উপাধ্যক্ষ-২ পদে তার নিয়োগ সঠিক যথার্থ ও কার্যকর আছে মর্মে আরেকটি অবৈধ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তার নিয়োগ বৈধ করা হয়। ২০২২ সালে তিনি উপাধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হয়েছেন। ২০১০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত অবৈধ প্রক্রিয়া উপাধ্যক্ষ-২ পদের বিপরীতে এমপিওসহ বেতন ভাতা ৩ কোটি ৮৮ লাখ ৩৩ হাজার ৮২ টাকা বিধি বহির্ভূতভাবে উত্তোলন করেন। এছাড়া বাসা ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাবদ অতিরিক্ত ১৭ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৫ টাকাসহ মোট ৪ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার ৯৫৭ টাকা তুলে নিয়েছেন তিনি।
কলেজের একাধিক সূত্র জানায়, অধ্যক্ষ বেলাল হোসেন ভূঁঞা বিগত এক যুগে আওয়ামী আমলে সাবেক মেয়র তাপসসহ একাধিক আওয়ামীলীগের নেতার পরিচয়ে কলেজের র্অধশত কোটি টাকা নানান অজুহাতে হাতিয়ে নিয়েছেন। যা দিয়ে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ২০২৪সালের ৫আগষ্ট ক্ষমতার পট পরির্বতণ হলে তিনিও ভোল পাল্টে ক্ষমতাসীনদের সাথে যোগ দিয়ে সকল অপর্কম হালাল করার চেষ্টা করছেন। এমন কি কলেজের অধ্যক্ষ পদেও বহাল থাকতে লাখ লাখ টাকাও খরচ করছেন। তবে কলেজের একাধিক শিক্ষক, র্কমচারী ও শির্ক্ষাথী অধ্যক্ষ বেলাল হোসেন ভূঁঞার সকল অনিয়ম-র্দূনীতির যতাযথ তদন্ত র্পূবক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন।
অনিয়ম-র্দূনীতির অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ বেলাল হোসেন ভূঁঞা বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছিলাম কিছুদিন। কিন্ত এখন আমি আর দায়িত্বে নেই। চাকুরী জীবনের প্রায় শেষ এই কয়টা দিন পার করতে পারলেই হয়। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র তাপসের কেমন শ্বশুরসহ তার নামে ওঠা অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন।
কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রফেসর আমিনুল ইসলাম তালুকদার অধ্যক্ষের অনিয়ম দুর্নীতি ও অর্থ কেলেঙ্কার বিষয় বলেন, আমি সম্প্রত্তি এই কলেজের ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্ব নিয়েছি। প্রিন্সিপাল বেলাল সাহেবের নামে কিছু অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের কথা আমার কানে এসেছে। কিন্তু অভিযোগে মানুষ যতটা বলেন ততটা বাস্তবে হয় না। আমরা তার দুর্নীতির বিষয় তদন্ত করে দেখার জন্য যথাযত কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব। তাছাড়া বেলাল সাহেব এই কলেজের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা অতি শীঘ্রই একজন স্থায়ী প্রিন্সিপাল নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ধানমন্ডির নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজ ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপালের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দুর্ণীতির সাথে জড়িত বা অযোগ্য কোন ব্যাক্তি থাকুক সেটা আমি কেনো কলেজের কেউই চাইবেন না বলেও জানান তিনি। ##