তোমার বাবাকে ডিবি তুলে এনেছে, এক লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে’

সিরাজ গঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:-

আলমাছ আলী। যাকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিলো!

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে দোবিলা ইসলামপুর ডিগ্রি কলেজের দপ্তরী আলমাছ আলীকে (৪৮) ডিবি পরিচয়ে তুলে এনে ১৮ ঘন্টা ডাকবাংলোয় আটকে রেখে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এ অভিযোগ তাড়াশ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক আশফাকুর রহমানের বিরুদ্ধে। গত সোমবার (২২ এপ্রিল) দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী, তার পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাত আটটার দিকে আলমাছ আলী তার বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে দোবিলা বাজারে যাচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ চারজন ব্যক্তি দুইটি মোটরসাইকেল নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে তাকে জোরপূর্বক কোথাও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে স্থানীয় কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে তাদের বাকবিতন্ডাও হয়। পরে নিজেদের ডিবির কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে আসেন তাড়াশের আধুনিক ডাকবাংলোতে।

সেখানে একটি কক্ষে আলমাছকে আটকে রেখে তার মোবাইল ফোনটিও কেড়ে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর উপ-পুলিশ পরিদর্শক আশফাকুর রহমান এসে তাকে আশ্বস্ত করেন ‘তোমার কোনো ভয় নেই। থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে দেখছি কি করা যায়।’

আলমাছ আলীর ছেলে দোবিলা ইসলামপুর ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্র মো. আরজু জানান, রাত সাড়ে দশটার দিকে তার বাবার মোবাইল দিয়েই তাকে কল করে বলা হয়, ‘তোমার বাবাকে ডিবি তুলে নিয়ে এসেছে। এক লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে।’ তবে কোথায় তাকে আটকে রাখা হয়েছে সে বিষয়ে না বলে বেলা ২টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, ‘এর মধ্যে টাকা নিয়ে এলে ভালো, নয়তো সিরাজগঞ্জ ডিএসবি অফিসে তোমার বাবাকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তুমি ছোট মানুষ। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। টাকা নিয়ে আসার সময় তোমার মাকেও সঙ্গে নিয়ে এসো। বের হয়ে কল দিলে তোমাকে জানিয়ে দেওয়া হবে কোথায় আসতে হবে।’ অন্য আরেকটি মোবাইল নম্বর থেকেও তাকে একবার ফোন করা হয়। মোবাইলে কথোপকোথনের রেকর্ডও তার কাছে রয়েছে। 

এদিকে স্থানীয় দোবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও নব নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাক্ষ মনিরুজ্জামানের ছোট ভাই ইউসুফ আলী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে আলমাছ আলীর ছোট ভাই আশরাফ আলী বিষয়টি তাকে অবগত করলে তিনি তাড়াশ থানার ওসিকে মোবাইলে কল করেন। ওসি সিরাজগঞ্জে একটি মিটিংয়ে আছেন বলে কলটি কেটে দেন। তিনি আশরাফ আলীর সঙ্গে থানায় এসে ওসি (তদন্ত) ফজলে আশিককে সব খুলে বলেন। 

আশরাফের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানার আরেক উপ-পুলিশ পরিদর্শক নিয়ামুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে ওসি (তদন্ত) তাৎক্ষণিকভাবে আলমাছ আলীকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। 
ওসি (তদন্ত) ফজলে আশিক বলেন, ‘কথোপকোথনের নাম্বার দুটির শেষ লোকেশন জানার জন্য উল্লাপাড়া সার্কেল মো. সরাফত ইসলামকে এসএমএস করে অবগত করা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে তার ছোটভাই আশরাফ আলী জানায়, তার ভাই আলমাছ আলীকে ডাকবাংলোয় আটকে রাখা হয়েছে।

এরপর তিনি উপ-পুলিশ পরিদর্শক নিয়ামুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। তবে সেখানে আলমাছকে না পেয়ে আবার থানায় ফিরে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরই আবার তার ছোট ভাই জানায়, তার ভাইকে পেয়ে গেছেন। তাদের আর কোনো অভিযোগ নাই।

অভিযোগকারী তার ভাইকে পাওয়া গেছে মর্মে থানায় লিখিত দিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। তবে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তারা দুজন আলমাছ আলীকে বিকেলেই তার সামনে হাজির করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান।

এদিকে ওই প্রধান শিক্ষক আরও জানান, ওসি সিরাজগঞ্জ থেকে ফিরে আমাকে বিকেলে দিকে ফোন করে বলেন ‘আপনারা কি আলমাছকে পেয়ে গেছেন? পুলিশের পদক্ষেপে কি আপনারা সন্তুষ্ট? তাহলে আর আলমাছকে আলীকে থানায় হাজির করার প্রয়োজন নাই।’