ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক বিভাগের তৎপরতায় যানজট নেই মহাখালীতে

কাজি সোহেল রানা : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের তৎপরতায় মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘিরে সর্বদা যানজটের সড়কে এখন আর যত্রতত্র গাড়ি থামছে না।

সড়কের দুই পাশে বন্ধ হয়েছে অবৈধ পার্কিং , যত্রতত্র গাড়ি থামানো নিয়ন্ত্রণের ফলে এ সড়কের গতি বেড়েছে অরো দ্বিগুণ।
এ গতি অব্যাহত রাখতে সার্বক্ষণিক মাঠে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন গুলশান ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।
ট্রাফিক বিভাগ জানায়, যত্রতত্র বাস দাঁড়ানো ও যাত্রী ওঠানো-নামানো বন্ধে চালকদের এখন সতর্ক করা হচ্ছে।
না মানলে দেওয়া হচ্ছে মামলা। আগামী সপ্তাহ থেকে কোনো সতর্কতা থাকবে না, সরাসরি অ্যাকশনে যাবে ট্রাফিক পুলিশ।
নির্দিষ্ট স্টপেজে বাসের যাত্রী গণনা করা হবে। পরের স্টপেজে যাত্রী ওঠানোর আগে সংখ্যা বেশি হলে মামলা দেওয়া হবে।
এ ছাড়া, পেট্রল ও গ্যাস পাম্পের সীমানার বাইরে সড়কে যানবাহনের কোনো সারি থাকতে পারবে না।
বুধবার মহাখালী এলাকায় দেখা যায়, টার্মিনালের সামনে কাজ করছেন ট্রাফিক সদস্যরা। সঙ্গে পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে মোতায়েন করা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক। আগে মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনের সড়কের দুই পাশেই লেন দখল করে বাস পার্ক করে রাখা হতো। এখন তা নেই। বাস থামানো মাত্রই ট্রাফিক সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক সদস্যরা হুঁশিয়ারিতে সরিয়ে দিচ্ছেন।

এ সড়কে চলাচলকারী অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোনো বাসকে যত্রতত্র পার্কিং যেমন করতে দেওয়া হচ্ছে না, তেমনি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যত্রতত্র ইউটার্নও। ট্রাফিক সদস্যের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকও ইউটার্নগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন। এ কারণে এ সড়কে যানবাহনের গতি বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি মহাখালী বাস টার্মিনালের পরিবহন ও শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ট্রাফিক পুলিশ। বৈঠকে মহাখালী টার্মিনালকেন্দ্রিক যানজটের প্রধান কারণগুলো শনাক্ত করা এবং তা সমাধানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মহাখালী টার্মিনালকেন্দ্রিক যানজটের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে ছিল- টার্মিনালে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বাস, টার্মিনালের ইন গেট ও আউট গেটে ব্যবস্থাপনার অভাব, টার্মিনালের সামনে অপ্রয়োজনীয় ইউটার্ন, সীমিত এলাকায় অতিরিক্ত তেল ও গ্যাসের পাম্প, এক্সপ্রেসওয়ে থেকে মহাখালীতে নামার র‍্যাম্প স্থাপন, এলাকাগত সীমা নির্ধারণ ও সমন্বয়ে সমস্যা।
এসব সমস্যা সমাধানে করণীয় বিষয়ে যেসব সিদ্ধান্ত হয়, সেগুলোর মধ্যে ছিল- মহাখালী বাস টার্মিনালে চলাচল করা অতিরিক্ত বাসের জন্য বিকল্প বাস ডিপোর ব্যবস্থা করা, টার্মিনালের পেছনে জায়গা বাড়ানো, টার্মিনাল থেকে রেডিসন হোটেল/কাকলী পর্যন্ত গেট-লক সিস্টেম চালু করা, টার্মিনালের ইন গেট ও আউট গেট ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা, টার্মিনালের ভেতরে দীর্ঘদিন অলসভাবে বাস থাকতে না দেওয়া, রাস্তার পাশে কোনো বাস না দাঁড়াতে দেওয়া, এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প ও টার্মিনালের সামনের ইউটার্ন বিষয়ে পর্যালোচনা।
মহাখালী ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আরিফুর রহমান রনি বলেন, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলায় মঙ্গলবার থেকে মহাখালীর সামনের সড়ক পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাস বে গুলো সক্রিয় করা হয়েছে। যত্রতত্র পার্কিং ও যাত্রী ওঠানো-নামানো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাস বে ছাড়া লোকাল যাত্রীবাহী বাস যেমন দাঁড়াবে না, তেমনি দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস নির্দিষ্ট বাস স্টপেজ ছাড়া দাঁড়াবে না। সঙ্গত কারণে পরিস্থিতি বদলে গেছে। সড়কে জট কমেছে এবং যান চলাচল গতিশীল হয়েছে। এটি বহাল ও চলমান রাখা সম্ভব যদি পরিবহন মালিক-শ্রমিক এবং যাত্রীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকে। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে চেষ্টার কমতি নেই।
ট্রাফিক গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) এ এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান ডিএমপি কমিশনারের অন্যতম প্রধান উদ্যোগ হলো সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যানজট নিরসন করা। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। আমরা সবসময় আন্তরিকতার সঙ্গে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অনেকগুলো বাস বে আছে। সেগুলোর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি।
বাসগুলোকে শৃঙ্খলায় আনতে গুলশান ট্রাফিকের ডিসির নির্দেশে মহাখালীতে নতুন করে ইনকামিং সড়কে একটি বাস বে চালু করা হয়েছে। এখন যত্রতত্র বাস দাঁড়ানো ও যাত্রী ওঠানো-নামানো বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
এ কর্মকর্তা বলেন, এখন থেকে টার্মিনালের সামনে আর কোনো যাত্রী ওঠানো-নামানো যাবে না। কাকলী, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে, খিলক্ষেত ফুটওভার ব্রিজ এলাকা ও আব্দুল্লাহপুরে বাস বে আছে। এসব বে’তেই শুধু বাস দাঁড়াতে পারবে। টার্মিনাল থেকে বের হয়ে মহাখালীতেও দাঁড়াতে পারবে না কোনো বাস। প্রথম দাঁড়াবে কাকলী বাস বে’তে।
তিনি বলেন, বাস বে’তে হবে চেকপোস্ট। সেখানে যাত্রী গণনা করবে পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের লোকজন। ফলে স্টপেজের বাইরে যাত্রী নিলেই ধরা পড়তে হবে, তাদের মামলা দেওয়া হবে। দূরপাল্লার গাড়ি টার্মিনাল থেকে বের হবে গেটলক পদ্ধতিতে। কাকলী ছাড়া গেট খুলতে পারবে না। খুললে বা যাত্রী নিলেই মামলা হবে। একইভাবে ইনকামিং সড়কে লোকাল বাসের ক্ষেত্রে আমতলী, কাকলীতে বাস বে’তে দাঁড়াতে পারবে। এরপর সোজা টার্মিনালে।
ট্রাফিক গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা মহাখালী এলাকার সমস্যা ও সমাধানের বিষয়গুলো শনাক্ত করে কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের অনুরোধে মহাখালী বাস টার্মিনালের পরিবহন মালিক-শ্রমিক পক্ষ স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করেছে। চালকদের সঙ্গে আমাদের মাঠপর্যায়ের ট্রাফিক সদস্যরা কথা বলছেন। অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসছে। বাসচালক ও যাত্রীরাও এ ব্যবস্থাপনায় অনেক খুশি। আমরা মনে করি, সবার সমন্বিত উদ্যোগে সম্পূর্ণ বদলে যাবে মহাখালী।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহাখালী টার্মিনালের পেছনের অব্যবহৃত জায়গার বাস ধারণক্ষমতা ১০০টি। অর্থাৎ অব্যবহৃত জায়গা টার্মিনালের সঙ্গে একীভূত করে আয়তন বাড়ানো হলে টার্মিনালের ভেতরেই পার্কিং সুবিধা বাড়ানো সম্ভব।
এ নিয়ে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান বলেন, মহাখালী বাস টার্মিনালের পেছনে অনেকটা জায়গা অব্যবহৃত অবস্থায় আছে। তা যদি মহাখালী টার্মিনালের সঙ্গে একীভূত করা যায়, তাহলে সমস্যা অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে। এ নিয়ে ট্রাফিক পুলিশ, পরিবহন মালিক-শ্রমিক পক্ষ এবং সিটি করপোরেশনের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে। আশা করছি শিগগিরই এর সমাধান হবে।
এক্সপ্রেসওয়ের নামার একটা র‍্যাম্প মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে চালু করা হয়েছে। ওঠার র‍্যাম্প চালু হলে সড়কের প্রেশার আর থাকবে না বলে মনে করেন ট্রাফিকের এ কর্মকর্তা।