ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়ায় মাদরাসা সুপার রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে অধ্য-কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

মোঃ আনোয়ার হোসেন, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া থানার ১নং রুহিয়া ইউনিয়নের মধুপুর ঈদগাহ দাখিল মাদরাসার সুপার মোঃ রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে অর্থ বাণিজ্য এবং সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে কৃষি, শরীরচর্চা ও কম্পিউটার বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা এবং ২০২০ সালে দুইজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর কাছ থেকে আরও ২০ লাখ টাকা গ্রহণ করা হয়। তবে এই অর্থ মাদরাসার উন্নয়নে ব্যয় না করে সুপার নিজে আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও, ২০১৭-১৮ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদ থেকে ল্যাট্রিন নির্মাণ ও ঘর মেরামতের জন্য বরাদ্দকৃত ২ লাখ টাকা উত্তোলন করে কোনো কাজ না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। মাদ্রাসার দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা অবস্থায় ৫টি ফলজ গাছ ও ২৫টি ইউক্লিপটাস গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, যার বাজারমূল্য আনুমানিক ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত শিক্ষা উপকরণও আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসিনা আক্তার এবং নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমি আক্তারের জন্য বরাদ্দকৃত মোবাইল ট্যাপ সুপার নিজের ছেলের ব্যবহারের জন্য রেখে দেন। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর চাপে হাসিনাকে ৬ মাস পর এবং সুমিকে ২ বছর পর অকেজো মোবাইল ট্যাপটি ফেরত দেন। এইসব অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ঠাকুরগাঁও শাখা এবং ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবগণ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, এমন সুপার আমরা আমাদের মাদ্রাসায় চাইনা এই সুপারের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। অন্যথায় আমরা সুপারের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হইবো।
মধুপুর ঈদগাহ দাখিল মাদরাসার কৃষি বিষয়ক শিক্ষক রোশনআরা বেগম জানান, আমার নিয়োগ ১১ জুলাই ২০১১ ইং তারিখে, আমার চাকুরী বিষয়ে লেনদেন আমি বলতে পারবো না। এই বিষয়টি আমার স্বামী জানে। মধুপুর ঈদগাহ দাখিল মাদরাসার শরীরচর্চা বিষয়ক শিক্ষক ফারজানা আক্তার বলেন, নিয়োগের পূর্বে আমার স্বামী ও আমার পরিবারের লোকজন সহ মাদরাসা সুপার রুহুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করেছে লেনদেন করেছে কিনা তা আমি সঠিক ভাবে বলতে পারব না। মধুপুর ঈদগাহ দাখিল মাদরাসার কম্পিউটার শিক্ষক বাবুল ইসলামের নিকট সরাসরি লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অভিযোগ করেছি। লেনদেনের বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। ২০২০ সালে নিয়োগ চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগকৃত নিরাপত্তা কর্মি লিটন জানান, লেনদেনের আংশিক স্বীকার করে। ২০২০ সালে নিয়োগকৃত আয়া দেলোয়ারা বেগম জানান, চাকরি বিষয়ে সুপারের সাথে আমার যে লেনদেনের বিষয় ছিল তা পরিশোধ করে দিয়েছে। আমার এখনো একটি ফাঁকা ব্যাংক চেক সুপার রুহুল আমিনের নিকট জমা আছে। আমার ব্যাংক চেকটি ফেরত চাইলে সুপার রুহুল আমিন কাল ক্ষেপন করে এখনো আমাকে চেকটি ফেরত দেননি। এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার মো. রুহুল আমিন এর সাথে সরাসরি কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, এর আগে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমার লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে একটি ভিডিও ছাড়া হয়েছে তাই আর আমি কোন সাংবাদিকের সামনে কথা বলবো না। এ কথা বলে তিনি চেয়ার ছেড়ে পালিয়ে যায়। মধুপুর ঈদগাহ দাখিল মাদরাসার এডহক কমিটির সভাপতি ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কে অভিযোগ করেছে, কি বিষয়ে অভিযোগ করেছে এবং কোথায় অভিযোগ করেছে? অভিযোগের কাগজপত্র প্রয়োজন। কাগজ পত্র পাঠিয়ে দেন, বিষয়টা আমি দেখবো। দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ আজমির শরিফ মারজী জানান, আমি অফিসিয়াল কাজেই বাইরে বেরিয়েছি, কাজ শেষে অফিসে ফিরে রেজিস্টার খাতা দেখে বিস্তারিত আপনাকে জানাবো। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদক কে বলেন, আমার কাছে প্রতিদিন অভিযোগ আসে। অভিযোগটি কবে এসেছে তা আমি এই মুহূর্তে বলতে পারবো না। অভিযোগ আসে থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।