টানা বৃষ্টিতে খুলনায় জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা
টানা বৃষ্টিতে খুলনায় জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি শ্রেণি কক্ষেও পানি জমে গেছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারীরা। বিশেষ করে স্থুলগামী শিশু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় নাকাল হচ্ছেন।
এদিকে, ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারকৃত মহানগরের মুজগুন্নী মহাসড়কটিও এখন পানিতে তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় সড়কের আশপাশের দোকানপাট ও বাড়ি ঘরও ডুবে গেছে। সড়কের কোথাও কোমর পানি, কোথাও হাঁটু। পানি বন্দী এলাকার মানুষের ভোগান্তিও চরমে। এই অবস্থার সমাধান চাইছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, গত দু’দিন ধরে খুলনার আকাশজুড়ে চলছে মেঘ-বৃষ্টির খেলা। থেমে থেমে অঝোর ধারায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আর নগরের অধিকাংশ সড়ক ও ড্রেনের পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় পানি নামতে পারছে না। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে খুলনা মহানগরীর অধিকাংশ সড়ক। বৃষ্টির পানিতে অলি-গলি ছাড়াও প্রধান প্রধান সড়কগুলো পানিতে থৈ থৈ করে। অধিকাংশ বাড়ি ও দোকানপাটের নিচতলা ডুবে যায়। বৃষ্টি থামার পরও অনেক সড়কের পানি নামে না।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সূত্র জানান, ২ অক্টোবর নগরীতে সর্বোচ্চ ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আর ৩ অক্টোবর রেকর্ড করা হয় ৪১ মিলিমিটার এবং ৪ অক্টোবর বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ নিয়ে গত তিনদিনে মোট ১৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরিয়েছে খুলনার আকাশ।
এদিকে, টানা বৃষ্টিতে অধিকাংশ সড়কে হাঁটুপানি জমে যায়। সড়কগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় কোথাও কোথাও সড়কে যানবাহন আটকা পড়ে। ফলে যানজটে পড়তে হয় নগরবাসীকে। একটু ভারি বৃষ্টি হলেই নগরীর সড়কে পানি জমে যায়। বিশেষ করে নগরীর খালিশপুর বিআইডিসি রোড, বাস্তহারা, বাইতিপাড়া, শান্তিধাম মোড়, রয়্যাল মোড়, টুটপাড়া, স্যার ইকবাল রোড, শামসুর রহমান রোড ও পিটিআই মোড়ে বৃষ্টি হলেই সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে নৌকা চলাচলের উপযোগী হয়ে যায়। টানা বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন কাজে বের হওয়া মানুষ। অনেক দোকান এবং বাড়ির নিচতলা পানিতে ডুবে যায়।
মুষলধারে বৃষ্টি হলে পয়ঃবর্জ্যে সয়লাব হয়ে যায় আটকে থাকা পানি। অনেক জায়গায় বর্জ্যের অংশ ড্রেনে আটক গিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজে ধীরগতির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর।
নগরীর বিআইডিসি রোডের সোহেল রানা বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কটি পানিতে তলিয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে অধিকাংশ সড়কে খানাখন্দ। আর এখন ড্রেনের কাজ চলছে। ফলে পানির প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে কাঁদা মাটি জমে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
নগরীর বাইতিপারা এলাকার দোকানি শাহজাহান সিরাজ বলেন, আধা ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই এলাকার রাস্তা ও গলি পানিতে ডুবে যায়। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা খুব খারাপ। ড্রেন ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি। তাই বৃষ্টি থামার পরও পানি নামতে সময় লাগে। আর কষ্ট নিয়ে চলাচল করতে হয় এলাকার মানুষদের।
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, সোমবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নগরীতে ১৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
তিনি জানান, মূলত সাগরে সৃষ্ঠ লঘুচাপের কারণে আকাশে জমা মেঘমালা থেকেই অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে। তবে শুক্রবার নাগাদ পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও মোংলা সমুদ্র বন্দরের ৩নং সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে, গত ৫ মাস আগে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে মুজগুন্নী মহাসড়কটি পুনর্র্নিমাণ করে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। নগরের সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে বয়রা বাজার হয়ে নতুন রাস্তা পর্যন্ত সড়কটি বিস্তৃত। প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কটি এর আগে সংস্কার হয় ২০১২ সালে। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে সড়কের পুরোটাই খানাখন্দে ভরে যায়। জনগণের নিরাপত্তা, দুর্ভোগ ও অর্থনৈতিক উন্নতির চিন্তা করে কেসিসি সড়কের সংস্কার ও ড্রেন নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করে।
চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল সড়কটি সংস্কার শেষ হলেও ড্রেন নির্মাণ কাজ এখনো চলছে। এদিকে, নিম্নমানের উপাদান দিয়ে কাজ করায় সুফলের চেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সড়কে চলাচলকারী প্রত্যেকের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নতুন সড়কের কিছু অংশে পিচ ঢালাই উঠে গেছে। বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত। সড়কের পাশে থাকা ড্রেনেজ লাইন দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি জমে গেছে।
বুধবার (৪ অক্টোবর) সকালে বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তায় যান চলাচল বিঘ্ন হয়। কোমর-হাঁটু পানির কারণে সড়কে আটকা পড়ে দীর্ঘ সময় পার করতে হয়েছে অনেককে। পদ্মার এপারের একমাত্র বিশেষায়িত শেখ আবু নাসের হাসপাতাল, নেভি অ্যাংকরেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্স, বিজিবির খুলনা সেক্টর সদর দপ্তর, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে আসা যাওয়া মানুষদের সড়ক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। রাস্তায় পানির স্রোত প্রবাহিত হওয়ায় অনেকে মাছ ধরছেন। কয়েকটি জায়গা বিপজ্জনক হওয়ায় লাল পতাকা তোলা হয়েছে।
শামীম হোসেন নামে এক পথচারী বলেন, মুজগুন্নী সড়কের শেষ হওয়া পুনর্র্নিমাণ কাজের সুফল মেলেনি। আগেও যেমন ভোগান্তি ছিল এখনও তাই রয়েছে। পুনর্র্নিমাণ কাজ শেষ হতে না হতেই ফুলে ফেঁপে উঠে খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে সড়কটিতে।
মুজগুন্নী এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, সড়ক ও ড্রেনের কাজ হলেও আমাদের ভোগান্তির কোনো কমতি হয়নি। রাস্তার কাজের টাকা জলেই গেছে। বৃষ্টি হলেই নিচু এলাকা ডুবে যায়। সড়কটির পানি আবু নাসের হাসপাতাল ও নেভি স্কুলের মাঝখান দিয়ে যে ড্রেন চলে গেছে সেখান দিয়ে গিয়ে ময়ূর নদীতে পড়ে। ড্রেন পাকা হয়ে যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে একটা সময় বড় একটি খাল ছিল। অবৈধ দখলের কারণে এটি এখন একটি নালায় পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, যেসব এলাকায় ড্রেনের কাজ শেষ হয়েছে সেখানকার ময়লা-আবর্জনা সরানো হয়নি। কোনো রকম কাজটি শেষ করে গেছে ঠিকাদার। যে কারণে জলাবদ্ধতা হয়। সেখানে মশা উৎপাদনের কারখানা তৈরি হয়েছে। নির্মাণ কাজে নিয়োগপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ বুঝে নেননি। এই রাস্তা করে মানুষের কোনো লাভই হয়নি। বরং আগের চেয়ে দুর্ভোগ আরও বেশি।
#