ঝিনাইদহ-৪ সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ডে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

কাজি সোহেল রানা,
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যাকাণ্ডে গতকাল বুধবার (২৬ জুন) আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফয়সাল ও মোস্তাফিজ নামের এই দুজনকে বান্দরবান থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদেরকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। আনারকে হত্যার আগে তারা কলকাতার একটি মার্কেট থেকে ১৭ হাজার টাকায় চেয়ার কিনে আনে। সঙ্গে কিনে আনে চেতনানাশক রাসায়নিক ক্লোরোফর্ম, যা দিয়ে তাকে অজ্ঞান করা হয়। এরপর খুনিরা আনারকে সেই চেয়ারে বসিয়ে হাত, মুখ ও চোখ বেধে নিখুঁতভাবে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। এই কাজগুলো করেছে গ্রেফতারকৃত ফয়সাল এবং হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ফয়সালকে এনে দেয় সিয়াম।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
এর আগে, গত বুধবার আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে বান্দরবান থেকে গ্রেফতার করে হেলিকপ্টারে ঢাকার পূর্বাচলে আনা হয়। সেখান থেকে নেওয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) তাদের আদালতে তোলা হয়েছে। তারা একসময় ট্রাক ড্রাইভার ছিলেন বলে জানিয়েছে ডিবি।
তাদের ব্যাপারে ডিবি হারুন বলেন, মোস্তাফিজ ও ফয়সাল হত্যার কাজ শেষ করে দেশে ফিরে শাহীনকে ফোন করে। বলে আমরা কোথায় থাকব। তখন শাহীনের একটা বাসা আছে বসুন্ধরায়, তারা সেখানে যায়। সেখানে গিয়ে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা বলতে বলতে ফোন বন্ধ হয়ে যায়। ফয়সাল ও মোস্তাফিজ ছিল ট্রাক ড্রাইভার। তাদের ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। মোবাইল বন্ধ করে তারা চলে যায় খাগড়াছড়ির গহীন অঞ্চলে। সেখানে সীতাকুণ্ড পাহাড়ের নিচে পাতাল কালীমন্দির আছে। সেখানে তারা নিজেদের নাম বদলে ফেলেন। ফয়সাল হয়ে যান পলাশ রায়, আর মোস্তাফিজুর হয়ে যান শিমুল রায়। এসব নাম ধারণ করে হিন্দু সেজে মন্দিরে অবস্থান করেন তারা। সেখানে থাকা লোকজনকে বলেন যে, মাকে তারা খুব ভালোবাসেন। কালীমন্দির ছাড়া থাকতে পারি না। এরপর থেকে সেখানে হিন্দু সেজে তারা লুকিয়ে ছিল।
ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে ধরতে ডিবির একটি টিম ছিল ঝিনাইদহে, সুন্দরবনেও একটি গিয়েছিল। আর দুটি টিম খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ডে কাজ করছিল অনেকদিন ধরে দাবি করে হারুন বলেন, সবদিকে গোয়েন্দা জাল বিছিয়ে আমরা গতকাল সেই দুজনকে গ্রেফতার করি। শিমুল ভূঁইয়ার নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ডের জন্য যা যা করার দরকার তারা তাই করেছে।
আনার হত্যাকাণ্ডের শুরুর দিনের ঘটনা যা ঘটেছে তা তুলে ধরে ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ১৩ মে সকালে এমপি আনার তার বন্ধু গোপালের বাসা থেকে বের হন। বিধানসভার কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে অপেক্ষায় ছিল ফয়সাল। তিনি আনারকে রিসিভ করে লাল গাড়ির কাছে যান। যেখানে অপেক্ষায় ছিল শিমুল ভূঁইয়া। আর অন্যদিকে কলকাতা সঞ্জীভা গার্ডেনের ভাড়া বাসায় অপেক্ষায় ছিলেন মোস্তাফিজ, জিহাদ হাওলাদার। ফয়সাল ও শিমুল ভূঁইয়া আনারকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলে রিসিভ করেন শিলাস্তি রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমান। তারা নিচে কর্নারের রুমে যান। আনার যখন বুঝতে পারেন তিন চারজনের গতিবিধি, তখন তিনি অনেক কাকুতি-মিনতি করেন, বাঁচার চেষ্টা করেন। দৌড় দিয়ে বের হতে চেষ্টার সময় ফয়সাল তার নাকে মুখে ক্লোরোফর্ম ধরে নিস্তেজ করেন। এরপর হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করা হয়।
সংসদ সদস্য আনার কিলিং মিশনে সাতজন অংশ নেয় এবং এই সাতজনকেই ডিবি গ্রেফতার করেছে দাবি করে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে শিমুল ভুঁইয়া, ফয়সাল, মোস্তাফিজুর, ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেফতার জিহাদ হাওলাদার, আমাদের তথ্যের ভিত্তিতে নেপালে আত্মগোপনে থাকা গ্রেফতার সিয়াম, তানভীর ও শিলাস্তি। এর বাইরে আরও দুজন আমাদের কাছে গ্রেফতার রয়েছেন। তারা হলেন আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু ও গ্যাস বাবু। ঢাকার ডিবির হাতে গ্রেফতার পাঁচজনের মধ্যে চারজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ ফয়সাল ও মোস্তাফিজ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।