ঝিনাইদহে বিএনপি নেতা শাহ্জাহান সিরাজ হত্যার বিচার আবারো নতুন করে আলোচনায়, ১৪ বছর পর মামলা পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ পরিবারের

মোঃ আবু সাইদ শওকত আলী,
  খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ

পরিবার বিচার না পাওয়ায় ঝিনাইদহের বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্জাহান সিরাজ হত্যার বিচারের বিষয়টি আবারো নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। প্রায় ১৪ বছর পর নিহত’র পরিবার হত্যা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। মামলার বাদী ও স্বাক্ষীদের হুমকী দেওয়ায় শাহ্জাহান সিরাজ হত্যা মামলার অপমৃত্যু ঘটে। রাজনৈতিক প্রভাবে পুলিশ আদালতে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার চুড়ান্ত রিপোর্ট দিতে বাধ্য হয়। বিগত ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর নিহত’র পরিবার ন্যায় বিচার ও খুনিদের চিহ্নিত করে বিচার পক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে তৎপর হন।

পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১১ সালের ৩ জুন মধ্যরাতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বৈডাঙ্গা গ্রামে সাগান্না ইউনিয়ন বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক শাহ্জাহান সিরাজকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। সে সময় বিএনপি সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী আলাউদ্দিন আল মামুনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার শেষ করে বাড়ী ফেরার পথে সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। প্রথমে তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মানিকগঞ্জে মারা যান।

শাহ্জাহান সিরাজ মৃত্যুর আগে তিনি পরিবারের সদস্যদের কাছে এই হত্যা মিশনে কারা অংশ নিয়েছিল তাদের নাম বলে যান। সে মোতাবেক থানায় এজাহার দাখিল করেন নিহত’র ভাই আলী হোসেন।
এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে সন্ত্রাসী সানোয়ার, ক্রসফায়ারে নিহত পাকরা জিয়া, প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী কামাল হোসেন, সাঈদ মুন্সি, মোজাম চেয়ারম্যান ও তার ছেলে রিপন, আইয়ুব হোসেন ও হালিম গাজী জড়িত থাকতে পারে বলে অভিযোগ ওঠে।
স্ত্রী ফাতেমা খাতুন জানান, তার স্বামী বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করার মুহুর্তে আ’লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ‘কথা আছে’ বলে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোজাম্মেল হককে বিজয়ী করতেই সন্ত্রাসীরা শাহ্জাহান সিরাজকে হত্যা করে।

হত্যার পর নিহত’র ভাই আলী হোসেন জোয়ারদার বাদী হয়ে ৮জনকে আসমী করে ঝিনাইদহ সদর থানায় মামলা করেন যার মামলা নং-১৮২/১১। কিন্তু খুনিরা আ’লীগের নেতাকর্মী হওয়ায় পুলিশ কোন আসামী গ্রেফতার করেনি। এদিকে বাদী মামলার তদ্বীর করতে না পারা ও সাক্ষিদের প্রাণনাশের হুমকী দেওয়ায় পুলিশ ৮ আসামীর সবাইকে চার্জসীট থেকে নাম বাদ দিয়ে ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান করে।

শাহ্জাহান সিরাজের ছেলে সাদ্দাম হোসেন অভিযোগ করেন, তার পিতার হত্যার বিচার করা হয়নি। পুলিশ প্রভাবতি হয়ে মামলাটির মৃত্যু ঘটিয়েছে। এমনকি আসামীরা শক্তিশালী হওয়ায় থানায় মামলা রেকর্ড হলেও তাদের জেল হাজতে যেতে হয়নি। এখনো চিহ্নিত খুনিরা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মামলা দায়েরের পর বাদী ও সাক্ষিদের হুমকী দেওয়া হয়। যে কারণে মামলার তদ্বীর করা যায়নি। এখন আমরা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করতে চায়।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার সন্দিগ্ধ আসামী আ’লীগ নেতা সাঈদ মুন্সি ও হালিম গাজী জানান, তাদের কোনদিন আদালতে যেতে হয়নি। প্রমান করতে না পারায় মামলাটি খারিজ হয়ে গেছে। সাঈদ মুন্সি আরো জানান, হত্যাকান্ডের পর থানা থেকে সেকেন্ড অফিসার এসেছিলেন। তিনি সাক্ষ্য প্রমান নিয়ে দেখেন আমরা কেউ এই মামলার সঙ্গে জড়িত নয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বর্তমান মিরপুর ডিবির পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম জানান, সাক্ষ্য প্রমানের অভাবে মামলাটির ফাইনাল দিতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, শাহ্জাহান সিরাজ হত্যার সঙ্গে এলাকার চরমপন্থি ক্যাডাররা জড়িত ছিল। তবে কারো না কারো ইন্ধনে তিনি খুন হয়েছিলেন।

ঝিনাইদহ জেলা জজ আদালতের এপিপি আলাউদ্দীন আজাদ জানান, ১৪ বছর পর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করতে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে হত্যা মামলার নথি তলবের আবেদন করেছে। কিন্তু তিন মাসেও তলবী নথির সার্টিফাইড কপি পাওয়া যায়নি। গত ২৯ জানুয়ারি নথির জন্য আবেদন করা হয়। নথি পাওয়া না গেলে বিকল্প ভাবে এই হত্যা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা যায় কিনা তার আইনগত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।