ঝিনাইদহে খেলার সময় ঘাস মারার ঔষধনলকূপে ঢেলে পানি পান, হাসপাতালে ভর্তি ৬ শিশু

মোঃ আবু সাইদ শওকত আলী,
খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার কাচারীতুলা গ্রামে খেলার সময় নলকূপের পানির সাথে কীটনাশক মিশিয়ে পান করে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে ৬ জন শিশু। সোমবার রাত ৯টার দিকে তাদেরকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।হাসপাতালে ভর্তি শিশুরা হলো- একই গ্রামের কামিরুল শাহর ছেলে হোসাইন শাহ (৪), সাইফুল শাহের মেয়ে মরিয়ম (৭), সাগর খাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ (৩), হাসান মন্ডলের মেয়ে জান্নাতুল (৯), রতন শাহর মেয়ে রোকেয়া (৯) ও মারুফ শাহের ছেলে মার্ফিয়া (৬)। তবে হাসপাতালের ডাক্তাররা জানিয়েছেন বর্তমানে তারা শঙ্কামুক্ত । 

শিশুদের আত্মীয়-স্বজনরা জানান, সোমবার দুপুরের দিকে কাচারীতুলা গ্রামের রমজান মন্ডল জমিতে ঘাস মারার কীটনাশক ছিটিয়ে বোতলে কিছু ওষুধ রেখে পাশের আম বাগানে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। পরে ভুল করে ওষুধের বোতল ফেলে বাড়িতে চলে যান। বিকেলে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি বাড়ির ছয়জন শিশু বোতলটি কুড়িয়ে পায়। তারা খেলার ছলে বোতলের ওষুধ রাস্তার পাশে থাকা একটি নলকূপের ভেতর ঢেলে দিয়ে সেই পানি পান করে। 
সন্ধ্যার দিকে রমজান মন্ডল তার ওষুধের বোতল খুঁজতে আসেন। কিছুক্ষণ পর কামিরুল শাহের চার বছরের ছেলে হোসাইন শাহের পেটে ব্যথা শুরু হয়। ওই শিশুর সঙ্গে কথা বলে নলকূপের ধারে গিয়ে কীটনাশকের বোতল পায় অভিভাবকরা।
পরক্ষণেই শিশুটিকে হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে রাত ৮টার দিকে তাদেরকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।  
অপরদিকে হোসাইনের সঙ্গে কীটনাশক মিশানো পানি খাওয়া অপর পাঁচ শিশুর বমির পাশাপাশি পেটে ও গলায় ব্যথা শুরু হলে রাতেই তাদের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ছয় শিশুর মধ্যে হোসাইনের পাকস্থলী ওয়াশ করা হয়।
হোসাইনের মা মমতাজ খাতুন বলেন, বাচ্চার পেট ব্যথা শুরু হলেই হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠায়। ওর পেটের বিষ ওয়াশ করে বের করা হয়েছে। এখন কী হবে বুঝতে পারছি না।
অপর শিশুর বাবা মারুফ শাহ বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে মেয়েটার পেটে ও গলায় ব্যথা শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পর বমি করতে থাকে। তখনই জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখন একটু সুস্থ্য আছে।
হরিনাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আল আমিন বলেন, একটি শিশু সন্ধ্যার দিকে হাসপাতালে আসলে তার শরীরে বিষ খাওয়ার আলামত পাওয়া যায়। কিন্তু হাসপাতালে ওয়াশ করার ব্যবস্থা না থাকায় শিশুটিকে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাঃ মেহেদী ইসলাম টিটু বলেন, শিশুরা বিষ খাওয়ার হিস্ট্রি নিয়ে সদর হাসপাতালে এসেছে। তবে তাদের শারীরিক অবস্থা প্রাথমিকভাবে শঙ্কামুক্ত মনে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে শিশুদের ভর্তি রাখা হয়েছে।
হরিনাকুন্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ রউফ খান বলেন, ঘটনাটি শোনার পর গ্রামটিতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। অসাবধানতাবশত খেলার ছলে শিশুরা নলকূপের পানির সাথে কীটনাশক মিশিয়ে খেয়েছে। তবে বিষয়টি শত্রুতামূলক মনে হচ্ছে না। তবুও আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি।