জাফলং–ডাউকি নদীতে ‘বালু দস্যুদের’ দৌরাত্ম্য: ইজারাবিহীন এলাকা থেকে ৫ কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন, ক্ষতির পরিমাণ ১হাজার ৫০০ ( শত) কোটি টাকা! বালুগুলো জব্দের জোর দাবি।

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট:
রাব্বি হাসনাত ইমন
বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সিলেটের জাফলং জিরো পয়েন্ট, ডাউকি নদী, বলির হাওর, বাংলাবাজার এবং বুধিগাঁও হাওরসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল “ECA (Ecologically Critical Area)” বা পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষিত। অথচ এসব এলাকায় কোনো সরকারি ইজারা না থাকা সত্ত্বেও দিনে-দুপুরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে—এমন অভিযোগে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ জেলা প্রশাসক, সিলেট বরাবর লিখিতভাবে জানানো হয়েছে আজমল হোসেন নামে এক পরিবেশকর্মীর স্মারকলিপিতে।
তিনি “নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন”–এর গোয়াইনঘাট উপজেলা শাখার আহ্বায়ক। এলাকার জনগণের পক্ষ থেকে প্রেরিত দুই পাতার এই স্মারকলিপিতে তিনি জানান,
ইজারাবিহীন এলাকা থেকে ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে প্রায় পাঁচ কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য হিসাব করলে প্রতি ঘনফুট ৩০ টাকা ধরে প্রায় ১ হাজার ৫০০ শত কোটি টাকা হয়। এসব বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করে নদীর পাড়ে বিশাল স্তুপ করে রাখা হয়েছে এবং নিয়মিত লোডার ও নৌকা ও বডি করে নদীপথে বিক্রি করা হচ্ছে।
একাধিকবার প্রশাসন থেকে অভিযান পরিচালিত হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এই অবৈধ বালু দস্যুরা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠছে। তারা শুধু বালু উত্তোলন করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, বরং নদীর তীরের , প্রাকৃতিক বাঁধ ও নালা ধ্বংস করছে। ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে এবং পরিবেশে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন আজমল হুসাইন।
আজমল হোসেন তাঁর স্মারকলিপিতে বলেন:> “আমরা দেখছি, প্রশাসন কয়েকবার অভিযান চালালেও
সেই অভিযান কার্যকর ফল দেয়নি। দুর্বৃত্তচক্র প্রকাশ্যে বালু তুলছে, সরকারি বিধিনিষেধ ও আদালতের আদেশ উপেক্ষা করছে। পরিবেশ ধ্বংস করে তারা বাণিজ্য করছে। এটা রোধ করতে না পারলে ভয়াবহ বিপর্যয় আসবে।”
আইন অমান্য করে চলছে প্রকাশ্য বালু খনন
বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২৩) অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া নদী বা হাওর থেকে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এছাড়া ২০১৯ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ECA ঘোষিত এলাকায় কোনো ধরনের খনন, গাছ কর্তন বা ভৌগলিক পরিবর্তন নিষিদ্ধ। কিন্তু দুর্বৃত্তচক্র কোনো আইন মানছে না বলে স্মারকলিপিতে দাবি করা হয়েছে।
আজমল হোসেন আবেদন: দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক
আজমল হোসেন তাঁর লিখিত আবেদনপত্রে জেলা প্রশাসকের কাছে কয়েকটি দাবির কথা উল্লেখ করেছেন:
অবৈধভাবে উত্তোলিত বালুর স্তুপ অবিলম্বে জব্দ করতে হবে
ড্রেজার মেশিনসহ অবৈধ যন্ত্রপাতি অপসারণ করতে হবে
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী ও সংশ্লিষ্ট দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে
ECA অঞ্চলে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড আর না ঘটে, সে লক্ষ্যে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে।
আজমল হোসেন বলেন,> “আমার দাবি, শুধুই
পরিবেশের পক্ষে। আমি কোনো রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থে কিছু বলছি না। দেশের আইন আছে, সংবিধান আছে, আদালতের আদেশ আছে—এসব উপেক্ষা করে কেউ বালু তুলতে পারে না। প্রশাসনের দৃষ্টি না পড়লে সামনে আরও ভয়াবহ
পরিণতি দেখা যাবে।”
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
স্মারকলিপি প্রেরণ করেন
আজমল হোসেন
আহ্বায়ক, নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন গোয়াইনঘাট