গড়ে তুলেছেন সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী

দিঘলিয়ার এক মূর্তিমান
আতঙ্কের নাম মিন্টু মোল্লা
খুলনা ব্যুরো ঃ
“দিঘলিয়া উপজেলায় আমি ইশারা দিলে যা চাই তাই হয় ” যার কথায় বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল খায় তার সাথে চিটিংবাজি করতে আইসেনা।আমার কল যদি রেকর্ড করো বুঝবা মরার জন্য রেডি হবা।
এরকম অসংখ্য দাম্ভিক কথোপকথনের বহুল আলোচিত ব্যক্তি হচ্ছেন সাইফুর রহমান মিন্টু মোল্লা। দিঘলিয়া উপজেলার মূর্তিমান আতঙ্ক এ ব্যক্তিই হচ্ছেন উপজেলা বিএনপির আহবায়ক।
আওয়ামীলীগ সরকার পতনের দিন ৫ আগষ্ট থেকে এ নেতা অদ্যবধি দিঘলিয়া উপজেলায় প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়া,চাঁদাবাজী,লুটপাট,মামলা-হামলা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে জনজীবনকে বিপন্ন করে তুলেছেন।গড়ে তুলেছেন ৫০জনের একটি সশস্ত্র বাহিনী।
বাহিনীটি গত ৫আগষ্টের পর থেকে অদ্যবধি দু,শতাধিক ঘরবাড়ি,ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা,ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ,জমি দখলসহ লুটে নিয়েছে আনুমানিক শতকোটি টাকা। আহত হয়েছে সাধারণ মানুষসহ আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা কর্মী। এ বাহিনীর হামলা- মামলা থেকে অনেক বিএনপি- জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীরাও রেহাই পায়নি।তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলন করেও কোন প্রতিকার হয়নি। অনেকে তার হুমকির ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৫আগষ্ট ছাত্রজনতার আন্দোলনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দিন থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠে দিঘলিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক বিতর্কিত সাইফুর রহমান মিন্টু মোল্লা। প্রকাশ্য দিবালোকে মিন্টু মোল্লার নেতৃত্ব সন্ত্রাসীরা ঘাড়ে রাইফেল, বন্দুক (অস্ত্র) নিয়ে মিছিল সহকারে নদীবেষ্টিত দিঘলিয়া উপজেলাকে ঘিরে ফেলে সকল খেয়াঘাট বন্ধ করে দেয়। প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীরা ঘাড়ে বন্দুক, রাইফেল নিয়ে একে একে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করেছে। অনেকের সম্ভ্রমহানি করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। যা স্বাধীনতা পরবর্তীকালে দিঘলিয়া উপজেলায় এটি প্রথম।
এমন ঘটনায় মানুষ হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। চারিদিকে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।এ সুযোগে মিন্টু মোল্লা বিভিন্ন রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের নিকট মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের চাঁদা আদায় শুরু করে।ধার্যকৃত চাঁদা না দিলে মামলা অথবা ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে (ভিন্ন অনুসারী) বিএনপি -জামায়াত ইসলামীও তার কাছ থেকে রক্ষা পায়নি। অনেক বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীর নামে নাশকতার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। একদিকে চাঁদা আদায় অন্যদিকে মিথ্যা মামলায় সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে উঠেছে।

অসংখ্য (শতাধিক) অভিযোগকারীদের মধ্যে ব্যবসায়ী শেখ এনামুল ইসলাম বলেন, দিঘলিয়া থানা সংলগ্ন তার বাড়ি। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন। ৫ আগষ্ট দুপুরে তার বাড়িতে সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে হামলা চালায় মিন্টু মোল্লা। নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকারসহ বাড়ির সমস্ত মালামাল লুট করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ক্ষতির পরিমান আনুমানিক ৫কোটি টাকা। এছাড়া নগরঘাটে ১একরের বেশী জমি দখল করে নেয়। এতেও ক্ষ্যান্ত হয়নি এনামুল শেখের বিরুদ্ধে ৪টি মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করেছে। অপরাধ তার ছেলে রবিউল ইসলাম আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতি করেন।
দিঘলিয়া সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মঞ্জুর হোসেন বলেন, স্থানীয় পথের বাজারে তপু এন্ড ত্বন্বী হার্ডওয়্যারের বড় দোকান। দোকানের তালা ভেঙে ভ্যান ও মিনি ট্রাকে করে দোকানের সমস্ত মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় পেট্রোল দিয়ে দোকানে অগ্নিসংযোগ করে। লুট কৃত মালের আনুমানিক মূল্য সাড়ে ৪কোটি টাকা। মঞ্জুর হোসেন ৩টি মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
উপজেলার গোয়ালপাড়া গ্রামের জিয়া শেখ।কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। স্থানীয় পথের বাজারে ওয়াল্টন ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর শো-রুমের মালিক।
মিন্টু মোল্লা শো-রুমের সামনে দাড়িয়ে থেকে লোকজন দিয়ে শো-রুম ও গোডাউনের তালা ভেঙে টিভি,ফ্রীজ,এয়ারকন্ডিশনারসহ যাবতীয় ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ভ্যান ভর্তি করে নিয়ে যায়। জিয়া শেখ জানায় তার শো-রুম ও গোডাউনের লুট কৃত মালামালের আনুমানিক মূল্য ৫লক্ষ টাকা। এছাড়া উপজেলা সদরে ৪৫শতাংশ জমি দখল করে নিয়ে নিয়েছে। ২টি মিথ্যা মামলা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমিতো কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নই। তাহলে আমার উপর কেন এই নির্যাতন?
অভিযোগে আরও জানা গেছে,ফরমাইশ খানা গ্রামের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী মন্টুর মুদি দোকান সম্পূর্ণ লুট করে। আকতার মেম্বারের বাড়ি ভাংচুর লুটপাট করে।
চন্দনী মহলে সাবেক ইউপি সদস্য আশ্রাফ মোল্লা, সেনহাটী গ্রামের ব্যবসায়ী আমিনুর, আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শাহআলম খান, খান আবু সাঈদের বাড়ি ভাংচুর ও মৎস্য ঘের লুটপাট করে।এছাড়া সেনহাটী গ্রামের শিক্ষক মঞ্জুরুল বাবু,মনির সাংবাদিকদের বাড়ি,দেয়াড়া গ্রামে সাংবাদিক তারেক এর বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করে।
যুবলীগের নেতা রুবেল মোল্লার বাড়ি ভাংচুর করে।দিঘলিয়ার নগরঘাট খেয়াঘাটের ইজারাদার চাঁদা না দেয়ায় মিন্টু মোল্লা তার বাহিনী দিয়ে ইজারাদারকে মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করেছে। মামলা হলেও গ্রেফতার নেই। সম্প্রতি পানিগাতী গ্রামের ঈদগা কমিটি গঠনে মিন্টু মোল্লা গ্রামবাসীর উপরে তার সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালায়। এতে গ্রামের অনেক লোক রক্তাক্ত জখম হয়। এর প্রতিবাদে গ্রামবাসী মিন্টু মোল্লার গ্রেফতার দাবি করে মানববন্ধন করে।

সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বারাকপুর ও গাজীরহাট ইউনিয়নে অধ্যবধি চলছে নির্মম নির্যাতন। এখানে ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাটের পাশাপাশি চলে পাশবিক নির্যাতন। প্রতিনিয়ত হচ্ছে নীরব চাঁদাবাজী। ঘেরের মাছ,গোয়ালের গরু,ক্ষেতের ফসল যে যার নিজের মনে করে নিচ্ছে। কোন প্রতিবাদ করলে রাতে বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ করার হুমকি দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের দিন ৫আগষ্ট মিন্টু মোল্লার নেতৃত্ব প্রকাশ্যে বন্দুক ও কাটা রাইফেল নিয়ে মিছিল সহকারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর,ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ওলুটপাট করে।উপজেলার চন্দনীমহল গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্তী রায়ের বাড়িঘর ভাংচুর করে দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে। ওই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা গণেশ রায়ের ছেলে গোবিন্দ রায়কে কুপিয়ে জখম করে বাড়িঘর ভাঙচুর করে। বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজীগ্রাম রাজবংশীপাড়া গ্রামের নিরাপদ বিশ্বাসের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট করে। আড়ুয়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মৎসখামার দখলসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা তুলছে।