খুলনার রাস্তায় পাগলের বেশে ঘোরা মেয়েটি ফিরলো পরিবারে # প্রেমের টানে ঘর ছাড়া
খুলনা নগরীর রাস্তায় ঘুরতে থাকা মেয়েটি অবশেষে পরিবারের সন্ধান পেয়েছে। শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) তাঁর পরিবারের সদস্যরা খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁকে গ্রহণ করে গাজীপুরের বাড়ির উদেশ্য রওনা করেন। পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) খুলনায় ঘোরাঘুরি করছিলেন একটি মেয়ে। খুলনার সোনাডাঙ্গা এবং শিববাড়ীর মাঝামাঝি সামি হাসপাতালের সামনে ওই তরুণীর দেখা মেলে। উদভ্রান্তের মতো তার চলাফেরা। বয়স আনুমানিক ১৬-১৮ বছর হবে। কোনো কথা বলে না। তাকে কেউ চেনেও না। অনেকের চোখে মেয়েটি ‘পাগলি’ ছাড়া আর কিছুই নয়। তাকে ঘিরে উৎসুক কিছু মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে। কারণ মেয়েটিকে দেখে ভালো পরিবারের সন্তান বলেই মনে হচ্ছিল।
রাতে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী মেয়েটিকে রূপসা ট্রাফিক মোড় এলাকা থেকে উদ্ধার করে। পরে তাঁকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করে। ফেসবুকের মাধ্যমে এ খবর তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন। তাদের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীনগরে। ওখানকার চৌরাস্তা এলাকায় তার বাবা ছোটখাট ব্যবসা করেন।
পরে জানা যায়, মেয়েটির নাম ঈশিতা। তার বাড়ি গাজীপুরে। কিন্তু সে খুলনা কীভাবে এলো? মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পেতে ফেসবুক ভিত্তিক বিভিন্ন গ্র“প প্রচারণা চালায়। বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে কাজ শুরু করে ‘ওয়াব (উই আর বাংলাদেশ)’ নামের একটি গ্র“প।
পরে মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পেতে মেয়েটির ছবি দিয়ে ফেসবুকে প্রচারণা চালানো হয়।
উদ্ধারকারী পুলিশ কনস্টেবল ও উই আর বাংলাদেশ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের এডমিন মো. আলী আকবর জানান, একটি ফেসবুক স্টাটাস দেখে সেখানে একজন কমেন্টে তার খোঁজ দিলে তাকে নগরীর রূপসা ট্রাফিক মোড় এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন খুলনা অক্সিজেন ব্যাংক এর স্বেচ্ছাসেবীরা রূপসা থেকে নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে খুমেক হাসপাতালে নেয়। মেয়েটি তখনও প্রলাপ বকছিলো। ফেসবুকের মাধ্যমেই ওই কিশোরীর বাবা -মা ও বান্ধবীর সাথে যোগাযোগ করে সংগঠনটি ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেয়েটির বান্ধবী জানায়, গত সোমবার (১৬ জানুয়ারি) গাজীপুর নিজ বাসা থেকে তাঁর বান্ধবী বের হয়ে আসে। তারপর থেকে কোন সন্ধান মিলছিল না। খুলনায় ইমু নামের এক ছেলের সাথে তাঁর প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। সে তাঁর উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়েছে বলে ধারণা করা করা হচ্ছে। তাঁর হাতে একটি কাগজে লেখা মোবাইল নম্বর পাওয়া গেছে। ইমু ইমু বলে বিলাপ করছিল।
বিকালে এ প্রতিবেদকের সাথে ওই পরিবারটির সাক্ষাতকালে মেয়েটি কোন কথা বলেনি। মেয়ের ভবিষ্যত মাথায় রেখে এ বিষয়ে অভিভাবকরাও কোন মন্তব্য করতে চাননি। তার বাবা বলেন, ‘আগে মেয়ে সুস্থ হোক। তারপরে সব শুনে জানবো প্রকৃত ঘটনা কী। আমরা এ বিষয়ে কিছু বলতে চাইনা, মেয়েকে পেয়েছি; তাতেই ভাল লাগছে।’
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালের চিকিৎসক ডা. অমিত সাহা জানান, মেয়েটি মানসিক ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সে, দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠবে বলেও আশা করিছি। তাঁর শারিরীক অবস্থা ভাল রয়েছে।
মেয়েটির মা-বাবা জানান, আকষ্মিকভাবে মেয়েকে হারিয়ে আমরা কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। কেন সে ঘর ছাড়লো বা এমন অবস্থা কিছুই জানিনা। কিন্তু সে ইমু ইমু বলে বিলাপ করছে।
তাঁর বাবা দাবি করেন, মেয়ের আগেও মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ছিল। চিকিৎসার পর সে চাকুরিরত ছিল। ১৪ জানুয়ারি সে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেনি। উদ্ধারকারীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে মেয়েকে নিয়ে ফিরছি। ও এখন কথা বলতে পারছে না। মেয়ে সুস্থ হলে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারবো।