খুলনার পাইকগাছায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় দুর্নীতির আখড়া

  

# অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে 

সোহেল রানা : অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিসহ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেশমা আক্তারের বিরুদ্ধে। এই অফিসটি এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তার কারণেই উপজেলার মহিলা ও শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে। তিনি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়টি পৈত্রিক সম্পদে পরিণত করেছেন। শুধু তাই নয় প্রথম শ্রেণির একজন সরকারি কর্মকর্তা নিজ উপজেলায় কর্মরত থাকায় গত এক বছরে তার ক্ষমতার অপব্যবহার ও দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ভুক্তভোগী মানুষসহ অফিসের কর্মচারিরাও। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ মার্চ ছিলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এ জন্মদিন উদযাপন করার জন্য সরকার ১১টি কিশোরী ক্লাবের ১১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু তিনি ১৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপন দেখিয়ে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেন।

এ অভিযোগের বিষয়ে রেশমা আক্তার অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, শুক্র ও শনিবার আমাদের মিটিং থাকে। যে কারণে আগের দিন আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পালন করি। সরকারিভাবে এদিনটি পালনের জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করার নিয়ম থাকলেও তিনি তা করেননি। একই ভাবে ২১ ফেব্রুয়ারি পালনের জন্য সরকারিভাবে ১১টি ক্লাবের জন্য ১১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু একটি মাত্র ক্লাবে এক হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করেন তিনি। বাকী টাকা নিজের পকেটস্থ করেন রেশমা আক্তার।

এসম্পর্কে রেশমা আক্তার বলেন, ১১টি ক্লাবেই ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয়।

সূত্র জানায়, সরকার উপজেলার ১১টি কিশোরী ক্লাবের জন্য হারমনিয়াম, ডুগি-তবলা মেরামত এবং বিবিধ খরচের জন্য ৩৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু কোন কাজ না করেই সব টাকা নিজে আত্মসাৎ করেন তিনি। যদিও হারমনিয়াম, ডুগি-তবলা মেরামতের জন্য ৩৩ হাজার টাকা খরচ করেছেন বলে জানান মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেশমা আক্তার।

উপজেলার প্রতিটি ক্লাবের ৩০ জনের জন্য সপ্তাহে শুক্র ও শনিবারের নাস্তা বাবদ ৩০ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু ১০ থেকে ১৫ জনের মাথা প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে নাস্তার ব্যবস্থা করে বাকী টাকা আত্মসাৎ করেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

নাস্তার টাকা আত্মসাৎ সম্পর্কে রেশমা আক্তার বলেন, আমরা ৩০ জনের নাস্তা দিই। প্রত্যেকের জন্য ২৫ টাকার নাস্তা দেওয়া হয়।

মা ও শিশু সহায়ক কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে ৬টি করে এবং পৌরসভায় ১৩টি কার্ড বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু এই কার্ড নিতে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেশমা আক্তারকে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা উৎকোচ দিতে হয়। উৎকোচ না দিলে কার্ড পাওয়া দুস্কর। অভিযোগ রয়েছে, রেশমা আক্তার নিজের ইচ্ছামত কার্ড বিক্রি করেছেন।

কার্ড বিতরণের অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে এই মহিলা কর্মকর্তা বলেন, এসব অভিযোগ কে করেছে ?

সূত্র জানায়, কোন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা নিজ উপজেলায় চাকরি করার বিধান নেই। কিন্তু গত বছর এপ্রিল মাসে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির প্রভাব খাটিয়ে নিজ উপজেলায় বদলি হন। তিনি এখানে এসে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্যালয়টি নিজের পৈত্রিক সম্পদে পরিণত করেছেন। একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা কিভাবে নিজ উপজেলায় চাকরি করেন এ নিয়ে পাইকগাছার মানুষের মধ্যে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রেশমা আক্তার বলেন, আপনি আমার অধিদপ্তরে জানেন।