খুলনায় নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা, দাম বাড়ছে হু হু করে

খুলনায় নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা, দাম বাড়ছে হু হু করে

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা 

খুলনায় নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ছে হু হু করে। 

এদিকে, কাঁচা মরিচ, বেগুনের পর এবার সেঞ্চুরি করলো পেঁয়াজে। একদিনের ব্যবধানে কেজিতে আরও পাঁচ টাকা বেড়ে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম। খুচরা ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। তাদের দাবি, পাইকারি পর্যায়ে তিন-চার দিন ধরে দাম বেড়েছে। 

এর আগে গত ১৯ আগস্ট পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ভারত সরকারের ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের খবরে দাম বাড়ে এই নিত্যপণ্যের। অস্বাভাবিক দর বেড়ে শতক ছুঁয়েছিল দেশি পেঁয়াজ। 

অন্যদিকে সব ধরনের সবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামাগ্রীর দাম বেড়েই চলেছে লাগামহীনভাবে। পঞ্চাশ টাকার নিচে মিলছে না অধিকাংশ সবজি। এদিকে, নিত্যপ্রয়াজনীয় আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম সরকার নির্ধারণ করলেও এখনো বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি খুলনার বাজারে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দফায় দফায় অভিযান পরিচালনা করলেও প্রভাব পড়েনি স্থানীয় বাজারে। 

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, এক বছরের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১১৩ শতাংশ, আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১১৪ শতাংশ।

এদিকে, বেঁধে দেওয়া পেঁয়াজের দাম কার্যকর করা সম্ভব হয়নি বলে স্বীকার করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। শুক্রবার রংপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘আমরা যে টার্গেট নির্ধারণ করেছিলাম, তা অ্যাচিভ (অর্জন) করা যায়নি। তারপরও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে মন্ত্রণালয় থেকে বেঁধে দেওয়া পণ্যের দাম কার্যকর করা যায়।’

অন্যদিকে পার যাচ্ছে রাগব বোয়াল ব্যবসায়িরা। তবে প্রজ্ঞাপন জারির সতের দিন অতিবাহিত হলেও আলু, পেঁয়াজ ও ডিম বিক্রি হচ্ছে না সরকার ঘোষিত মূল্যে।

শনিবার নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আলু ৫০ টাকা, প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত দুইদিন আগেও প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ব্রয়লার মুরগির ডিম প্রতিহালি ৫২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সরকার সতের দিন আগে ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিকেজি আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা ও প্রতিহালি ডিম ৪৮ টাকা দরে বিক্রি করতে হবে। অথচ এ পণ্য তিনটির মূল্য নির্ধারণ করলেও এখনো দাম কমেনি। 

এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোজ্য সয়াবিনের দাম রয়েছে এখনো ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে ভোজ্য সয়াবিন ফ্রেশ (৫ লিটার) ৮৫০ টাকা, তীর (৫ লিটার) ৮৫০ টাকা, বসুন্ধরা (৫ লিটার) ৮৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। 

বেড়েই চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় রসুনের মূল্য। শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি রসুন ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দুই মাস আগেও প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে। 

কমছে না ব্রয়লার মুরগির দাম। নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা দরে। ব্রয়লার মুরগির মূল্য অস্বাভাবিক হওয়ায় বিপাকে সীমিত আয়ের মানুষ। 

কমছে না গরুর গোশের মূল্য। প্রতিকেজি গরুর গোশ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। যা নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে কেনা খুব কষ্টকর।  

কমছে না মসুর ডালের দাম। বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মসুর ডাল (সরু) ১৪০ টাকা, মসুর ডাল (মোটা) ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।   

কমছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম। বাজারে ৫০ নিচে মিলছে না নিত্য প্রয়োজনীয় সবজির দাম। নগরীর এ্যাপ্রোচ রোডস্থ কেসিসি সুপার মার্কেট, নতুন বাজার ও ময়লাপোতা কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে প্রতিকেজি বেগুন ১০০টাকা, উচ্ছে ৫০, কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাকরল ৫০ টাকা,  রসুন ২৪০ টাকা, ঝিঙে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। 

নগরীর ময়লাপোতা কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে আসা ক্রেতা কলেজ শিক্ষক মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বারবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে একাধিক ব্যবসায়ির জরিমানা করলেও বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি।

ময়লাপোতা কেসিসি সন্ধ্যা বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, সব ধরনের সবজির দাম একটু বাড়তি। দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি তেমন কোনো জবাব দিতে পারেননি। 

আরেক ব্যবসায়ী কাওসার আলী বলেন, প্রতিকেজি দেশে পেঁয়াজ ১০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।