খুলনায় নারী ফুটবলারদের আতঙ্ক কাটেনি, প্রতিবাদে মানববন্ধন
খুলনায় নারী ফুটবলারদের আতঙ্ক কাটেনি, প্রতিবাদে মানববন্ধন
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা
খুলনায় চার নারী ফুটবলারকে মারধরের প্রতিবাদে ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) খুলনা জেলা শাখা মানববন্ধন কর্মসূচি করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে, মারধরের পর মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ায় বর্তমানে নারী ফুটবলার আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলার চার নারী ফুটবলারকে মারধরের প্রতিবাদে ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নারী জাতির উত্থান ও জাগরণের অন্তরায় ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যা দেখে সমাজের অন্য কেউ এহেন জঘন্যতম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে না।
তারা বলেন, যেখানে নারীরা খেলাধুলায় এগিয়ে যাচ্ছে বিশেষ করে ফুটবলে। যেখানে পুরুষ ফুটবলাররা এখনো স্বর্ণ পদক আনতে পারেনি। সোনা এনেছে মেয়েরা। সেই মেয়েদের ওপর অত্যাচার করা মানেই হলো আমাদের সুনামটা বাধাগ্রস্ত করা। আমরা শুধু এই মেয়েদের জন্য কথা বলছি না। সব মেয়ে যারা খেলাধুলা করেন তাদের জন্য বলছি। অনেক তরুণেরা স্পোর্টসে যায় না, তারা মাদকে জড়িয়ে পড়েন, অন্যান্য অপরাধচক্রে জড়িয়ে পড়েন। আমরা যারা মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি সবার একই দাবি, চার নারী ফুটবলারকে মারধরের ঘটনায় সুস্পষ্টভাবে যেন অপরাধীদের শাস্তির বিধান হয়।
মানববন্ধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিডিইআরএমের খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি সুব্রত কুমার মিস্ত্রী।
বক্তৃতা করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিভুতোষ রায়, নিশিত রঞ্জন মিস্ত্রী, অ্যাডভোকেট প্রসেঞ্জিত দত্ত, সালমা জাহান, জয়দেব দাস, শিল্পী গাইন, মিলন দাস, কিশোর রায়, রাম দাস, শান্তা ম-ল, পবিত্র ম-ল, বন্যা পাল প্রমুখ।
অপরদিকে, মারধরের পর থেকে এখনো নারী ফুটবলাররা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন।
বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা সুপার কুইন ফুটবল একাডেমির খেলোয়াড় সাদিয়া নাসরিন বলেন, হামলার পর থেকে এখনো আমরা সবাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আমাদের হুমকি প্রদান করা হচ্ছে।
তেঁতুলতলা সুপার কুইন ফুটবল একাডেমির সভাপতি ইসলাম হাওলাদার বলেন, হামলার ঘটনায় মেয়েদের মধ্যে আতঙ্কে বিরাজ করছে। অনুশীলনের জন্য খেলোয়াড়দের ডেকে ডেকে আনতে হচ্ছে। আগে কোনো দিন গ্রামের কেউ ফুটবল খেলা নিয়ে মেয়েদের উত্ত্যক্ত বা কটূক্তি করেনি। কিন্তু নূর আলমের পরিবার এবার ঝামেলা বাধিয়েছে।
বটিয়াঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শওকত কবির বলেন, ঘটনার পর মামলা হওয়ার আগেই নুরুল আলমকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। অপর তিন আসামি আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। মঙ্গলীর চিকিৎসার ব্যাপারে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। তাদের পরিবার ও অন্য খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার ব্যাপারেও আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া মামলার সকল ধারার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগুচ্ছি।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই রাত ৮টা থেকে প্রায় ১০টা পর্যন্ত চার নারী ফুটবল খেলোয়াড়দের বিভিন্নভাবে শরীরিক নির্যাতন চালায় নুরুল আলম খাঁ, তার স্ত্রী রঞ্জি বেগম, মেয়ে নূপুর খাতুন ও ছেলে সালাউদ্দিন খাঁ। হাত-পা বেধে রাখার দুই ঘণ্টা পর ফুটবলার মঙ্গলীকে উদ্ধার করে স্থানীয় তেঁতুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রশিক্ষণরত সুপার কুইন ফুটবল একাডেমির কর্মকর্তরা। তবে ঘটনা শুরু ২৭ তারিখ বিকাল থেকে। ঐ দিন প্রশিক্ষণ চলাকালীন সাদিয়া নাসরিনের ছবি তোলে নূপুর খাতুন। পরে সেই ছবি বিক্রিতভাবে উপস্থাপন করে সাদিয়ার বাবা-মাসহ অন্যদের কাছে। এর দুইদিন পর জানতে পারে সাদিয়া। এরপর সন্ধ্যার দিকে রাস্তায় নূপুর ও তার মায়ের সঙ্গে দেখা হলে ছবির কথা জিজ্ঞাসা করলে সেখানে সাদিয়াকে শারীরিক লাঞ্ছিত করে। পরে রাত ৮টার দিকে সাদিয়ার অভিভাবকসহ বন্ধুদের নিয়ে নুরুল খাঁর বাড়িতে গেলেই চলে তাদের ওপর নির্যাতন। এই ঘটনায় সাদিয়া ৩০ জুলাই চারজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, একই দাবিতে আগামীকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে জনউদ্যোগ খুলনা মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।