খুলনাজুড়ে অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকের ছড়াছড়ি, অভিযান জোরদার
# সন্ধানী’র অপারেশন থিয়েটার পরিচালনায় ওয়ার্ডবয়, দেড় লাখ টাকা জরিমানা
# চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনিয়মে অনুসন্ধান ও থাইরয়েড সেন্টারকেও জরিমানা
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
নানা কারণে বারবার আলোচনায় থাকা খুলনা মহানগরের বাবুখান রোডস্থ সন্ধানী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার (ওটি) পরিচালনা করা হচ্ছে ওয়ার্ড বয় দিয়ে। এমনকি অপারেশন থিয়েটারের রেজিস্ট্রেশন খাতা নিয়ম অনুযায়ী মেইনটেইন করা হচ্ছে না, অ্যাসিষ্ট্যান্ট চিকিৎসকও উপস্থিত ছিল না, ব্লাড কালেকশন রুমও ছিল নোংরা পরিবেশ। এ অভিযোগের ভিত্তিতে ওই প্রতিষ্ঠানটিকে ১ লাখ ৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একইভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের অভিযোগে থাইরয়েড সেন্টারকে ২০ হাজার টাকা ও অনুসন্ধান ডায়াগনস্টিক এন্ড থায়রয়েড সেন্টারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করা হয়।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টা থেকে রাত পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর শোয়াইব আহমাদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন। এ সময় সিভিল সার্জন অফিসের এমওসিএস অফিসার ডা: শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা উপস্থিতি ছিলেন।
এদিকে, খুলনাজুড়েই অনুমোদনহীন ও অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি চলছে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা অনিয়ম, অসম প্রতিযোগিতা এবং এক ধরণের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করছে এসব প্রতিষ্ঠান। যদিও নামধারী এবং কমিশনলোভী কতিপয় প্রথিতযশা চিকিৎসক এসব প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ করছে বলে জানা গেছে।
খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর শোয়াইব আহমাদ বলেন, নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টারগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, অনুমোদনবিহীন ল্যাব পরিচালনা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অপারেশন পরিচালনা করে আসছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে সন্ধানী ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক কমপ্লেক্সকে দেড় লাখ টাকা এবং থাইরয়েড সেন্টারকে ২০ হাজার টাকা ও অনুসন্ধান ডায়াগণস্টিক এন্ড থায়রয়েড সেন্টারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করা হয়। ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯ এর ৫২ ধারায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ জরিমানা করা হয়।
সিভিল সার্জন অফিসের এমওসিএস ডা: শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা বলেন, সন্ধানী ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক কমপ্লেক্সে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) পরিচালনা করা হচ্ছে ওয়ার্ড বয় দিয়ে। এমনকি অপারেশন থিয়েটারের রেজিস্ট্রেশন খাতা নিয়ম অনুযায়ী মেইনটেইন করা হচ্ছে না, অ্যাসিষ্ট্যান্ট
চিকিৎসকও উপস্থিত ছিল না, ব্লাড কালেকশন রুমও ছিল নোংরা পরিবেশ। এ অভিযোগের ভিত্তিতে ওই প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৫০ টাকা এবং থাইরয়েড সেন্টার লাইসেন্স নবায়ন না করায় ২০ হাজার টাকা ও অনুসন্ধান ডায়াগনস্টিক এন্ড থায়রয়েড সেন্টার কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স দেখাতে না পারায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন অফিসের সমন্বয়ে এ অভিযান চলমান থাকবে।
এর আগে ১৭ জানুয়ারি র্যাব-৬ এর স্পেশাল কোম্পানীর একটি দল নগরীর হরিণটানা থানাধীন মোহাম্মদপুর এলাকায় ছফুরা ক্লিনিক ও মোহাম্মদনগন হসপিটাল এ- ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ছফুরা ক্লিনিক ও মোহাম্মাদনগর হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এদিকে, খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, খুলনা শহরে ২৭০ টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। এদের মধ্যে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নবায়ন রয়েছে ৯৮ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের। এছাড়া নবায়ন হয়নি এমন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ১৫৭টি। এর মধ্যে ডায়াগণস্টিক সেন্টার রয়েছে ১০২টি এবং ক্লিনিক আছে ৫৫ টি। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের এক বছরের, কারো ২ বছরের কারো বা ৩ বছরের আবার কেউ ৪ বছরেও কোন নবায়ন করেননি।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, নগরীতে কোন আবেদন ছাড়াই এমন লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টার রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে রয়েছে খুলনা শিশু হাসপাতাল ( ক্লিনিক), খুলনা শিশু হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ( ডায়াগনস্টিক), খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতাল, ডায়াবেটিক সমিতি খুলনা (ডায়াগনস্টিক), সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক-১ (ডায়াগনস্টিক), সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক-২ (ডায়াগনস্টিক), জাপান মেডিকেল সেন্টার (খুলনা শাখা-১) এবং নিউ পথ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। এছাড়া নগরীতে শুধুমাত্র অনলাইনে আবেদনের ওপরই অনেকেই বছরের পর বছর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করছেন কিন্তু লাইসেন্স নেই এমন অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে ১৪টি । এর মধ্যে রয়েছে বয়রা সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বায়ো ল্যাব ডায়াগণস্টিক সেন্টার এ- কনসালটেশন সেন্টার, নূরজাহান ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার, কালিয়া ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (ক্লিনিক), কালিয়া ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (ডায়াগনস্টিক সেন্টার), পাল্প ডেন্টাল সেন্টার, স্বাস্থ্য সেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টার, স্বাস্থ্য সেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টার, মাই মেডিকেল ল্যাব ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার, জেনারেল ডায়াগণস্টিক এন্ড রির্সোস সেন্টার, বেস্ট কেয়ার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (ক্লিনিক), বেস্ট কেয়ার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (ডায়াগনস্টিক সেন্টার), রহিমা ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার এবং শাবাব ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৮২ সালের মেডিক্যাল অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানোর সুযোগ নেই। এসব বৈধ-অবৈধ অনেক হাসপাতালে প্রায়ই ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।