কোহলি বা ধোনী নয়: ২২ বছর বয়সেই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেটার, কে এই তরুণ?

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেটার, এই কথা শুনলে প্রথমেই হয়ত চোখে ভেসে উঠবে ভিরাট কোহলি কিংবা টেন্ডুলকার, অথবা ধোনীর ছবি। এটা ভাবার অবশ্য কারণও আছে। যারা  জাতীয় দলে খেলেন তাঁদের ভালো বেতন, আইপিএলে কোটি কোটি রুপির চুক্তি, বাণিজ্যিক জগতে বিশ্বখ্যাত সব প্রতিষ্ঠানের পণ্যদূত, নানা ব্যবসায় বিনিয়োগ—আয়ের খাতের তো অভাব নেই।

তবে শুনলে কিছুটা চমকে যাবেন ভারতের কিংবা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেটার কিন্তু কোহলি-ধনীরা নন, এমন একজন, যিনি মাত্র ২২ বছর বয়সেই অবসরে চলে গেছেন। তাঁর নাম আর্যমান বিড়লা। যার সম্পদের পরিমাণ ৭০ হাজার কোটি রুপি। এই সম্পদমূল্যের কারণে আর্যমানকে সবচেয়ে ধনী ক্রিকেটার বলাই যায়, কারণ প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ভারতের বর্তমান ও সাবেকদের মধ্যে আর কারও সম্পদই এর ধারেকাছে নেই। কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকারের সম্পদমূল্য প্রায় ১ হাজার ৪৫০ কোটি, আর ধোনি ও কোহলির সম্পদ এখনো এক হাজার কোটির নিচে।

অল্প বয়সে ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছেন আর্যমান, আবার হাজার কোটি টাকার মালিক খেলেছেন আইপিএলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের পেশাদার ক্রিকেট। আর্যমান ব্যবসার মাধ্যমে যেমন হাজার কোটি টাকার মালিক, আবার ক্রিকেটার হিসেবেও ছিলেন পেশাদারই। এমনকি ভারতের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের শীর্ষ প্রতিযোগিতা রঞ্জি ট্রফিতে একটা সেঞ্চুরিও আছে তাঁর। শুধু তা-ই নয়, আইপিএলের একটি দল নিলাম থেকে তাঁকে কিনেও নিয়েছিল।

আর্যমান বিড়লার নামের শেষাংশেই বুঝে ফেলার কথা তিনি ভারতের বিখ্যাত ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদিত্য বিড়লা গ্রুপ পরিবারের সন্তান। আদিত্য বিড়লা গ্রুপের চেয়ারম্যান কুমার মাঙ্গালাম বিড়লা আর্যমানের বাবা।

তবে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে আর্যমান এই ‘বিড়লা’ পরিচয়ে যে বিব্রত হতেন, সেটি নিজেই জানিয়েছিলেন ক্রিকইনফোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, ‘যখন আমি খেলতে শুরু করি, মানুষ আমাকে নামের দ্বিতীয় অংশ দিয়ে চিনত। আমি শুনতাম তারা আমাকে “বিড়লার ছেলে”, “বিড়লার নাতি” বলছে। কিন্তু আমি আমার পারফরম্যান্স দিয়ে ধারণা বদলাতে পেরেছি। তারা আমাকে ভিন্নভাবে চিনতে শুরু করেছে।’

আর্যমানের জন্ম ১৯৯৭ সালে। মুম্বাইয়ে জন্ম হলেও বেড়ে ওঠা মধ্যপ্রদেশের রেওয়ায়, যেখান থেকে পরিচালিত হয় আদিত্য বিড়লা গ্রুপের সিমেন্ট ইউনিটের ব্যবসায়িক কার্যক্রম। শৈশবে ক্রিকেটে মজে যাওয়া আর্যমান দ্রুতই জুনিয়র ক্রিকেটের গণ্ডি পার করে সিনিয়র পর্যায়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন।

ভারতের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের শীর্ষ প্রতিযোগিতা রঞ্জি ট্রফিতে তাঁর অভিষেক হয় ২০১৭ সালের নভেম্বরে, মধ্যপ্রদেশের হয়ে ওডিশার বিপক্ষে। প্রথম ম্যাচে রজত পাতিদারের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করে ৬৭ বলে ১৬ রান করেন আর্যমান। পরের বছর ইডেন গার্ডেনসে বেঙ্গলের বিপক্ষে খেলেন ১৮৯ বলে ১০৩ রানের ইনিংস। সব মিলিয়ে ৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেন আর্যমান, ১ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটিসহ ২৭.৬০ গড়ে করেন ৪১৪ রান। এ ছাড়া চারটি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচও খেলেন।

এর মধ্যে ২০১৮ সালে আইপিএলের দল রাজস্থান রয়্যালস তাঁকে নিলাম থেকে ৩০ লাখ রুপিতে দলে ভেড়ায়। তবে আইপিএল দলে থাকলেও কোনো ম্যাচে নামানো হয়নি আর্যমানকে। তবে নিজের ক্রিকেটার পরিচয়কে যে ছড়িয়ে যেতে পেরেছেন, তাতে বেশ খুশিই ছিলেন আর্যমান, ‘একজন এসে যখন বলল, “তুমি সাধাসিধে মানুষ। তুমি যে বিড়লা পরিবারের ছেলে, জানতামই না।” তখন মনে হলো নিজের পরিচয়ে একটা পরিবর্তন আনতে পেরেছি।’

রাজস্থান রয়্যালস আর্যমানকে বসিয়ে রেখেছিল টানা দুই আসর। কোনো ম্যাচ না খেলিয়ে ২০১৯ সালের নভেম্বর তাঁকে ছেড়েও দেওয়া হয়। ওই বছরের শুরুর দিকে চোটের কারণে খেলার বাইরেও থাকতে হয়েছিল আর্যমানকে। একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নিজেই ক্রিকেট থেকে সাময়িক বিরতির সিদ্ধান্ত নেন। ওই সময় ইনস্টাগ্রামে আর্যমান লেখেন, ‘আমাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব পথচলা আছে। আমি এখন নিজেকে বুঝতে চাই, খোলা মনে সবকিছু নতুনভাবে ভাবতে চাই, দেখি কী খুঁজে পাই।’

২০২৩ সালে আর্যমানকে আদিত্য বিড়লা ফ্যাশন অ্যান্ড রিটেইল লিমিটেডে পরিচালক হিসেবে আদিত্য বিড়লা গ্রুপে যুক্ত করা হয়। তিনি আদিত্য বিড়লা ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন এবং গ্রাসিম ইন্ডাস্ট্রিজেও পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এখন তিনি পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী।  

সূত্রঃ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস