কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ডাক্তার সংকটের কারণে রুগীদের ভোগান্তি,দ্রুত পরিত্রাণের আবেদন ভুক্তভোগীদের

মোঃ আবু সাইদ শওকত আলী,
ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধিঃ
চিকিৎসক সংকটে কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটডোর ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসা দিচ্ছেন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা(সেকমো)। অনকলে মিলছে মেডিকেল অফিসারদের। দ্রুত এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়,৫ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা। দুই লাখ মানুষের বসবাস এ উপজেলায়। এ ছাড়া ভৌগোলিক দিক দিয়ে কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫ টি উপজেলার মাঝে অবস্থিত। এ কারনে  চৌগাছা, মহেশপুর,কালিগঞ্জ, ঝিনাইদহ সদর,চুয়াডাঙ্গা উপজেলার একাংশের রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এতে করে রোগীদের বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
এ চাপ মোকাবেলা করছেন,স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৬ জন নিয়োগপ্রাপ্ত  ও ৩ অনারারী উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা (সেকমো)। যার মধ্যে রয়েছে সেলিম আক্তার,গোলাম মাহবুব,সুমাইয়া খাতুন, শাহানাজ বেগম,দীপক কুমার পাল,সাকিল মেহেদি ও অনারারী উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আব্দুল্লা আল-মাসুদ,আজিজুল হাকিম,মাহফুজ আলম। অন্যদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসক না থাকায় উপজেলার দুইটি সাব-সেন্টার থেকে চিকিৎসক নিয়ে এসে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে রোগীদের। তাও মেলে অনকলে এমনটাই জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
স্বরজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখে গেছে,কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দুই ভাগে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। একটি আউটডোর ও অন্যটি জরুরি বিভাগ। আউটডোরের চার কক্ষে চিকিৎসা দিতে দেখা গেল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চার জন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের (সেকমো)। এরমধ্যে ১০৪ নাম্বার কক্ষে শাহানাজ বেগম ও ১০৮ নাম্বার কক্ষে সুমাইয়া খাতুন প্রতিনিয়ত রোগীদের চিকিৎসা দেন। আর ১০১ ও ১০৯ নাম্বার কক্ষে রোস্টার অনুযায়ী সেকমোরা ডিউটি করেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া জরুরি বিভাগে তিন জন সেকমো রোস্টার অনুযায়ী আগে থেকে ডিউটি করতেন চিকিৎসকদের সঙ্গে। তবে এখন রোস্টার অনুযায়ী ডিউটি করলেও ডিউটি করেন চিকিৎসক বিহীন এমনটাই দাবি করেছেন তারা।
বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাকিল মেহেদী বলেন,আগে স্যারেদের সঙ্গে আমরা ডিউটি করতাম। বর্তমানে সার্বক্ষনিক আমরাই চিকিৎসা দিচ্ছি রোগীদের। সমস্যা হলে স্যারেদের ডাক দেয়া হয়।
তিনি বলেন,চিকিৎসক সংকট থাকায় স্যারেরা মূলত অনকলে থাকেন। প্রয়োজনে ফোন করলেই স্যারেরা আসেন।
এ কথার সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক  তানভীর জামানের(প্রতিক)। তিনি বলেন,সপ্তাহে তিন দিন ২৪ ঘন্টা করে ডিউটি করতে হচ্ছে। মুলত আমরা অনকলে ডিউটি করছি। আর প্রতিদিনের রাউন্ড দিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমাদের শুধু রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার কাজ না। রয়েছে সার্টিপিকেট লেখা,মিটিং,ট্রেনিং সহ অনেক কাজ।
তিনি আরো বলেন,বিষয়টি নিয়ে উদ্ধোতন কর্মকর্তাদেরকে জানানো হয়েছে। তারপরও কোন সমাধান হয়নি। এভাবে ডিউটি করা সম্ভব না। এরপরও করতে হচ্ছে। এতে করে রোগীদের ভোগান্তি ও বেড়েছে বলে মনে করেন ওই চিকিৎসক।
কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাড়ার ভুক্তভোগী ফজলে রাব্বী বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশেই আমার বাড়ি। এ কারনে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আশা পড়ে। দেখতে পায় এখন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সার্বক্ষনিক চিকিৎসা দেন সেকমো চিকিৎসকরা। কোন মেডিকেল অফিসারদের চোখে পড়ে না। অথচ আগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলেই মানুষ মেডিকেল অফিসারদের চিকিৎসা নিতে পারতেন।
তিনি বলেন,আমরা আগের দিনের মত মেডিকেল অফিসারদের চিকিৎসা পেতে চাই। চাই না সেকমো দিয়ে চিকিৎসা। তিনি দ্রুত এ অবস্থা থেকে উত্তরনে কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
একই কথা বললেন মহেশপুরের আলমপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আব্দুল আলীম। তিনি বলেন,স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলে এখন আর তেমন চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। কবরাজদের মত করে কোন চিকিৎসা নিয়ে চলতে হচ্ছে আমাদের। আগে আসলে চিকিৎসক পাওয়া যেত,এখন আর পাওয়া যায় না।
আরেক ভুক্তভোগী শরিফুল ইসলাম( শান্ত)প্রশ্ন তোলেন,চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নিয়ে। তিনি বলেন,২/৩ বছর হয়ে গেল নতুন ভবন উদ্ভোধন হয়ে পড়ে রয়েছে। তাতে কোন কার্যক্রম না থাকায় চুরি হচ্ছে ওই ভবনের মালামাল। নস্টো হচ্ছে মূল্যবান সরঞ্জামাধি।এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা নিতে এসে চিকিৎসক পান বলে অভিযোগ ওই ভুক্তভোগীর।
এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আমানুল্লাহ-আল-মামুন বলেন,স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আপাতত কোন চিকিৎসক নাই। এ উপজেলার সাব-সেন্টার থেকে দুই জন চিকিৎসককে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদেরকে দিয়ে মূলত চিকিৎসা সেবা চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন,স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি আশে পাশের ৫ উপজেলার মাঝে অবস্থিত। এ কারনে ওই সব উপজেলা থেকে প্রতিনিয়ত রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এতে করে বাড়তি চাপ সইতে হয় আমাদের।
তিনি আরো বলেন,প্রতিনিয়ত আউটডোরে ১ হাজার থেকে ১২শ রোগী চিকিৎসা দেয়া হয়। এ সংখ্যা অনেক সময় ১২ থেকে ১৫ শ হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার হলেও  প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন ১শ থেকে ১২০শ জন করে।
তবে খুব দ্রুত এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে দাবি করেন তিনি। কারন হিসেবে তিনি বলেন,কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি একটু আলাদা। অন্য কোথাও ডাক্তার না পেলেও এখানে ১/২ জন চিকিৎসক আমরা পাব বলে বিশ্বাস করি।