কেন্দুয়ায় বিয়ের প্রলোভনে তরুণীকে ধর্ষণ, থানায় মামলা

মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, ময়মনসিংহ বিভাগের বিশেষ রিপোর্টরঃ
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় বিয়ের প্রলোভনে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
২৩ জুন সকাল ৭.৩০ মিঃ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের চন্দলাড়া গ্রামের বিদেশ থেকে ফেরত আসা তমজিদের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে মীম নামের একটি মেয়ে অনশনে বসে কান্না করছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে এই ভুক্তভোগীর মা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন, অভিযোগটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর আওতায় প্রাথমিকভাবে আমলে নিয়েছে পুলিশ।
অভিযোগে জানা যায়- কেন্দুয়ার গড়াডোবা ইউনিয়নের চন্দলাড়া গ্রামের মোসা: মারুফা বেগমের (৪০) মেয়ে মীম আক্তার (১৮), যিনি চট্টগ্রামে একটি প্রাইভেট গার্মেন্টসে চাকরি করেন।
জানা যায়- প্রায় এক বছর একই গ্রামের প্রবাসী যুবক তমজিদ আহম্মেদের (২৪) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান, বিয়ের আশ্বাসে প্রেমের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে উভয় পরিবার বিয়ের জন্য নিরব ভুমিকায় জ্ঞাতও ছিল।
প্রবাসী তমজিদ গত ৪ জুন দেশে ফিরেন এবং ৫ জুন রাত আনুমানিক ৮:৩০টায় কৌশলে মীম আক্তারকে তার বাড়িতে নিয়ে যান, ভালবাসা ও বিয়ের কথা বলে ওই রাতে নিজ বসতবাড়ির সাথে একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘরে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে। এরপর মীমকে নিয়ে ভৈরবের একটি আবাসিক হোটেল ও পরে বন্ধুর বান্ধবীর বাড়ি (ভৈরব) স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে সারারাত একাধিকবার ধর্ষণ করে। পরদিন সকালে বাড়ি ফিরলে মীমের মা বাবা সব জানতে পেরে মীমকে ঘর থেকে বের করে দেয়। কেঁদে কেঁদে ভুক্তভোগী মীম আক্তার তার সম্মানহানির কথা তার পরিবারের কাছে জানালে মা বাবা বিয়ের জন্য তমজিদ ও তার পরিবারকে অনুরোধ করে। প্রথমত তমজিদ মেনে নিতে চাইলেও তমজিদের বাবা বিয়েতে রাজি না হয়ে উল্টো গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয় এবং ছেলের জন্য বিয়ের উদ্যোগ নিয়ে অন্য জায়গা (বড়কান্দা) বিয়ে ঠিক করেন। বিয়ের কথা শুনে (মীম) ভুক্তভোগী তরুণী বিবাদী তমজিদের বাড়িতে অবস্থান (অনশন) করেন এবং মীম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। দুইদিন অনশনে থাকার পর গ্রামের লোকজন তমজিদের বাড়িতে দরবার সালিশ বসে গ্রামের লোকজন তমজিদকে অপরাধী বা দোষী সাভ্ব্যষ্ত করেন এবং জরিমানা হিসেবে ২লক্ষ টাকা দিতে হবে এই মর্মে স্বীদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিছু গ্রামের অসাধু ব্যক্তিরা টাকা দিয়ে দামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করলে মীম মানতে নারাজ।
দরবারীরা মীমকে ২ লক্ষ টাকা দিতে চাইলে মীম আবার ঐ বাড়িতে অনশনে বসতে চাইলে বাড়িতে বসতে দিবে না বলে গালিগালাজ করে শরীরে আঘাত করতে চেষ্টা করে। এই ভয়ে তমজিদের বাড়ির সামনে নির্জন গাছের নিচে একা অবস্থান করে অন্ধকারে অনশন শুরু করে। বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমদাদুল হক তালুকদার ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এর সহযোগিতায় ঐরাতে ৪টার সময় এসআই জাহিদ হাসান তার নেতৃত্বে মীমকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং পরিবার আশঙ্কা করছিল, মীম যেকোনো সময় আত্মঘাতী (ফাঁসি) সিদ্ধান্ত নিতে পারেন,তার জীবনের আরও অনেক কিছু ক্ষতি হতে পারে।
এই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৯(১) ও ৭ ধারায় ধর্ষণ ও অপহরণের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজুর যোগ্য। এই ধারায় দোষী সাব্যস্ত হলে যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ডসহ অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। তাছাড়া ভিকটিমের মানসিক অবস্থা বিবেচনায় তার নিরাপত্তা ও চিকিৎসা সহায়তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
ভুক্তভোগী মীম বলেন- তমজিদ আমার সাথে ১ বছর প্রেমের অভিনয় করে বিদেশ থেকে ফিরে রাতে তার ঘরের পাশে ধর্ষণ ও ৮ জুন তার বন্ধুর বান্ধবীর এলাকায় আবাসিক হোটেলে এবং বান্ধবীর বাড়িতে সারারাত কয়েকবার ধর্ষণ করেন।
বিষয়টি মা বাবা জানার পর তমজিদ ও তার পরিবারের কাছে বললে প্রথমত স্বীকার করলেও পরে তা অস্বীকার করে। আমাকে বিয়ে না করলে এই জীবন রাখবনা, মরে যাব।
এক প্রশ্নের জবাবে মীম আরও বলেন- এই দেহ দিয়ে বেঁচে থেকে কি লাভ। আমি শুধু তমজিদকেই চাই, আমার আর কিছুই প্রয়োজন নাই।
কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন- “অভিযোগ পেয়ে মামলা রুজু করেছি। আসামীর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে আসামীরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও জানান- ভিকটিমের ১৬৪ধারায় জবানবন্দি ও মেডিকেল পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনা আবারও প্রমাণ করে- নারীদের প্রতি বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণা ও যৌন সহিংসতার ঘটনা গ্রামীণ সমাজেও বাড়ছে। প্রেমের নামে ফাঁদ পেতে নারীর সম্ভ্রম হরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সমাজের উচিত এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং ভিকটিমকে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা।