কেডিএ মেম্বারের সরকারী খাল দখল করে নকশা বর্হিভূত ভবন নির্মাণ

রক্ষকই যখন ভক্ষক :

মো. আমিরুল ইসলাম, খুলনা অফিস :
খুলনা মহানগরীকে বাসযোগ্য ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার পরিবর্তে চলছে তুঘলকি কান্ড। নগরীতে ভবন নির্মানে কেউই মানছেন না সরকারী বিল্ডিং কোড ও কেডিএ’র বিধিমালা। গড়ে উঠছে একের পর এক অবৈধ ও নিয়ম বর্হিভূত ভবন ও স্থাপনার জঞ্জাল। নগরী জুড়ে ভবনের জঞ্জাল তৈরীতে এবার অভিযোগ খোদ কেডিএ’র পরিচালনা বোর্ড মেম্বর প্রকৌশলী শেখ শওকত আলীর বিরুদ্ধে। তিনি রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করছেন। তিনি নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকায় সরকারী খাল দখল করে কেডিএ’র নকশা অমান্য করে ভবন নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকৌশলী শেখ শওকত আলী নিরালা আবাসিক এলাকার ১৮নং রোডের ৩৫৫নম্বর প্লট হোল্ডিংয়ের মালিক। কেডিএ বোর্ড মেম্বরের ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেডিএ’র বিধিমালা ও আইনকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধভাবে এসব কাজ করছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তার দেখাদেখি আশপাশের আরও অনেকেই সরকারী খাল দখল ও কেডিএ’র নকসা বর্হিভূতভাবে ভবন নির্মান করেছেন। ইতিমধ্যেই আবাসিক এলাকার শৃঙ্খলা রক্ষা, পানি নিস্কাশনসহ পরিবেশ সুরক্ষায় সরকারী খাল দখল ও নকসা বর্হিভূতভাবে ভবন নির্মানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে গত ২৮ এপ্রিল কেডিএ চেয়ারম্যান, গৃহায়ন ও গণপুর্ত প্রতিমন্ত্রী, খুলনা সিটি মেয়র, গৃহায়ন ও গণপুর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব ও দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগের সূত্রে ও সরেজমিন পরির্দশনে জানা গেছে, খুলনা নগরীর ২৪নং ওয়ার্ডের নিরালা আবাসিক এলাকা ও নির্জন আবাসিক এলাকার মাঝখান দিয়ে একটি সরকারী খাল বয়ে গেছে। এ খালের পাশ দিয়ে নিরালা আবাসিক এলাকার ১৮ নম্বর রোডের কয়েকটি প্লটের বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। এ সকল প্লটের মধ্যে ৩৫৫নং হোল্ডিংয়ের মালিক কেডিএ বোর্ড মেম্বার ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক্স) শেখ শওকত আলী একটি ৯তলা ভবন নির্মাণ করছেন। তিনি ভবনটির পিছনের অংশে সরকারী খালের জায়গা ভরাট করে নকশা বর্হিভূত ও বেআইনিভাবে ভবনের বর্ধিতাংশ নির্মাণ করেছেন। কেডিএর বোর্ড মেম্বার ও মোংলা বন্দরের প্রধান প্রকৌশলীর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অনিয়ম করে ভবন নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কেডিএ বোর্ড মেম্বর শওকত আলীর দেখাদেখি ১৮নং রোডের পাশর্^বর্তী ৩৫৭ ও ৩৫৮নং প্লট হোল্ডিংয়ের মালিকেরা তাদের ভবনের পিছনের অংশে সরকারী খালের জায়গা দখল করে কেডিএর অনুমতি না নিয়ে ভবন নির্মাণ করে বসবাস করছে। একই সাথে কেডিএ’র মতো সরকারের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের বোর্ড সদস্য হয়েও অনুমোদন ছাড়া সরকারী খালের জায়গা দখল ও নকশা বর্হিভূতভাবে ভবন নির্মাণ করায় এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কেডিএ বোর্ড মেম্বারসহ ভবন মালিকদের ও কেডিএ সংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধানকারী কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সময় মৌখিকভাবে বিষয়টি অবহিত করা হলেও ভবন মালিকরা নিয়মনীতির তেয়াক্কা না করেই নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যা কেডিএ’র পরিকল্পিত নগরী গড়ার চেষ্টাকে ব্যর্থ করছে এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে বলেও তারা অভিযোগ করেন। একই সাথে নিরালা আবাসিক এলাকায় কেডিএ বোর্ড মেম্বার প্রকৌশলী শেখ শওকত আলীসহ অবৈধ ভবন নির্মান ও খাল দখলকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবীও জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

অভিযোগের বিষয়ে কেডিএ’র বোর্ড মেম্বার ও প্রকৌশলী শেখ শওকত আলী জানান, তিনি কেডিএ’র নকশা অনুযায়ী ৯তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। নির্মাণ কাজের সময় কেডিএ’র পরিদর্শকরা তদারকি করেছেন। তবে পিছনের খালের জায়গা দখল করে বর্ধিতাংশ নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, আশেপাশের আরো অনেকেই খাল দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করায় তিনিও সেভাবেই করেছেন। এসময়ে তিনি কেডিএ’র বোর্ড মেম্বার পরিচয় দিয়ে কেডিএ’র নিয়ম-কানুন সম্পর্কে অবগত আছেন বলে জানান। কিন্তু কেডিএ বোর্ড মেম্বার হিসেবে ভবন নির্মাণে স্বচ্ছতা বজায় না রেখে কেন সরকারী খাল দখল করে নিয়ম বর্হিভূতভাবে স্থাপনা করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন কেডিএ ও সরকারী প্রশাসন বললে তিনি ভবনের বর্ধিতাংশ ভেঙে ফেলবেন। তবে তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও খুলনার বিভিন্ন সাংবাদিকদের সাথে তার সখ্যতার কথা উল্লেখ করে ভবন নির্মাণে কোন অন্যায় ও অনিয়ম করেননি বলে জানান।

খুলনা সচেতন নাগরিক কমিটি ও নাগরিক আন্দোলনের নেতা এ্যাড. কুদরত-ই খুদা বলেন, রক্ষক হয়ে ভক্ষক হলে সেটা সবচেয়ে মারাত্নক অন্যায় কাজ। আইনের উর্ধ্বে কেউই না। সবাইকে আইন মেনে চলতে হবে। যদি কেডিএ’র সাথে সংশ্লিষ্ঠ বা কেডিএ’র নীতি নির্ধারক হন তাহলে তাকে আরও বেশী আইন মানতে হবে। তা না হলে অন্যরা তার দেখাদেখি ও তাকে অনুসরণ করে আইন ভঙ্গ করার কাজে উৎসাহিত হবে। আমরা সরকারী খাল সংরক্ষনে ও উদ্ধারে আমরা আন্দোলন করছি। সেখানে খাল দখল করে কেডিএ’র একজন নীতি নির্ধারক ভবন নির্মান করছে এটা খুবই অন্যায়। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ ধরণের কাজ করে থাকলে সে জঘন্যতম অপরাধ করেছে। এ বিষয়টির তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন ও ভবনের নকশা বাতিলপূর্বক ভবন অপসারণ করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কেডিএ’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম মিরাজুল ইসলাম বলেন, কেডিএ’র আওতাভুক্ত এলাকায় কোন ভবন ও স্থাপনা নির্মান করতে হলে আইন ও বিধি বিধান মেনেই করতে হবে। কেডিএ’র বোর্ড মেম্বর বা ক্ষমতাধর যে কেউ হোক না কেন ভবন নির্মানের নকশা ও বিধিমালা না মানলে ছাড় দেয়া হবে না। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি জানান।