কবিরাজির মাধ্যমে অর্থ দ্বিগুন করার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে গৃহবধূর নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার আত্মসাতের ঘটনায় প্রতারক কবিরাজ গ্রেফতার।

ভিকটিম কোতয়ালী মডেল থানাধীন শংকরপুর রেল-স্টেশন এলাকার মধ্য বয়স্ক বিধবা নারী। প্রায় ছয় মাস আগে অজ্ঞাতনামা একজন ব্যক্তি তার বাড়িতে আসে এবং সে নিজেকে একজন কবিরাজ হিসেবে পরিচয় দেয়। 

তাদের মধ্যে কথাবার্তার একপর্যায়ে কবিরাজ ভিকটিমকে বলে আমি যেকোন টাকার নোট ও স্বর্ণালংকার আমার কবিরাজি গুনে দ্বিগুন করতে পারি, সে আরও বলতে থাাকে আমি মূলত মানুষের কল্যানে কাজ করে থাকি এবং তাদের সম্পদ দ্বিগুন করে দেই।

কবিরাজ এসময় ভিকটিমকে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য তার সামনেই কৌশলে একটি নোটকে ডাবল করে দেখায়। সে মূলত ভিকটিমকে প্রলোভনে ফেলতেই এমনটা করে আর ভিকটিম তার কবিরাজি বিদ্যা দেখে বিশ্বাস করে ফেলে এবং তার প্রলোভনে পড়ে যায়।

এরপর কবিরাজ ভিকটিমকে বলে সে যদি কিছু টাকা আর স্বর্ণালংকার দেয় তবে সেগুলো ডাবল করে দিবে। এই বলে কবিরাজ তার একটি মোবাইল নাম্বার ভিকটিমের নিকট দিয়ে চলে যায়।

পরবর্তীতে কিছুদিন পর গত ২৪জুন ২০২৫খ্রিঃ দুপুর বেলা ভিকটিমের বাড়িতে তার ছোট বোন বেড়াতে আসে, ঠিক একই সময় ঐ কবিরাজও তার বাড়িতে এসে হাজির হয় এবং ভিকটিমের বোনকেও একইভাবে প্রলোভন দেখায় ও একটি নোটকে দ্বিগুন করে দেখায়। 

এরপর কবিরাজ ভিকটিম এবং তার বোনকে বলে তাদের ঘরে যত নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার আছে সেগুলো দিতে, সে এগুলো ডাবল করে দিবে। কবিরাজের এমন প্রলোভনে ভিকটিম বিশ্বাস করে তার ঘরে থাকা ৪,২৫,০০০/= টাকা ও বিভিন্ন প্রকার স্বর্ণালংকার সর্বমোট ৩ ভরি স্বর্ণ তুলে দেয়। 

তখন ভিকটিমের সামনে কবিরাজ একটি কার্টুনের মধ্যে টাকা এবং স্বর্ণালংকার গুলো রাখে এবং ভিকটিমকে বলে দুই ঘন্টার পর এগুলো দ্বিগুন হয়ে যাবে। কিন্তু কবিরাজ অত্যন্ত সুকৌশলে উক্ত টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে চলে যায়। 

পরবর্তীতে ভিকটিম ও তার বোন প্রায় দুই ঘন্টা পর তার দেওয়া মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে উক্ত নাম্বারটি বন্ধ পায়। তখন তাদের মনে সন্দেহ হয় এবং দ্রুত কার্টুনের কাছে গিয়ে কার্টুনটি খুলে দেখতে পাই তার মধ্যে কয়েকটি কাগজপত্র ছাড়া কিছুই নেই। 

তখন ভিকটিম ও তার বোন বুঝতে পারে যে, তারা সম্ভাবত কোন প্রতারক কবিরাজের খপ্পরে পড়েছে, যে তাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে সব কিছু আত্মসাৎ করেছে। 

এমতাবস্থায় ভিকটিম যশোর জেলা পুলিশ কে বিষয়টি অবহিত করলে জেলার সম্মানিত পুলিশ সুপার মহোদয় ঘটনার প্রকৃত রহস্য ‍উদঘাটন সহ জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারে জেলা গোয়েন্দা শাখা(ডিবি) যশোরকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

ভিকটিমের তথ্য ও সম্মানিত পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশনায় ডিবি’র অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে এসআই(নিঃ)/ শিবু মন্ডল সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সের সমন্বয়ে একটি টিম রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করে ইং ০২/০৭/২০২৫খ্রিঃ রাত ০২.৫০ ঘটিকায় অভয়নগর থানাধীন ধোপাদী এলাকার আসামির মোঃ ইসমাইল গাজী(৪৮)কে তার নিজ বসত বাড়ি হতে গ্রেফতার করেছে। সে ধোপাদী গ্রামের আনছার আলী গাজীর ছেলে বলে জানা যায়।

পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এবং তার তথ্য ও দেখানো মতে তার হেফাজত হতে নগদ ৩,৪০,৫০০/= (তিন লক্ষ চল্লিশ হাজার পাঁচশত) টাকা এবং বিভিন্ন স্বর্ণালংকার যার ওজন ৪০.১০গ্রাম (স্বর্ণ সাদৃশ্য- ০১টি আংটি, ০১ জোড়া বড় দুল, ০১ জোড়া পাশা, ০১ জোড়া বেবি পাশা, ০২ জোড়া রিং, ০১টি নাকের আকড়া, ০১টি লকেট সহ চেইন, ০১টি লকেট ছাড়া চেইন ও ০১টি বালা), উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়।

মামলা- কোতয়ালী মডেল থানার মামলা নং-০৬, তাং- ০২/০৭/২০২৫খ্রিঃ, ধারা-৪২০/৩৮০ পেনাল কোড ১৮৬০।

এসংক্রান্তে আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।