এশিয়ার সর্ববৃহৎ সূর্য্যপুরী আম গাছ বাংলার হরিণমারীতে

ফিরোজ হাসান ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি:

এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ সূর্য্যপুরী আম গাছটি ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারীতে। দুইশত বছরেরও পুরোনো এই আমগাছটির ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য শুধু দেশের পর্যটক নয়, বিদেশের অনেক অতিথিকেও আকৃষ্ট করে। শত ব্যস্ততার মাঝেও একটু সময় করে ছুটে গিয়ে চোখ জুড়ানোর লোভ সামলাতে পারেন না অনেকে। শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের কাছে নয়, এই আমগাছটি এখন বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে গোটা দেশে। গাছের মূল থেকে ডালপালাকে আলাদা করে দেখতে চাইলে রীতিমত ভাবতে হয়।

ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের প্রিয় একটি আমের জাত সূর্য্যপুরী। সুস্বাদু, সুগন্ধী, রসালো আর ছোট আঁটি সূর্য্যপুরী আম জাতটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সূর্য্যপুরী বোম্বাই জাতীয় লতানো বিশাল আকৃতির আমগাছটি ৭৪ শতাংশ জমির উপরে অর্থাৎ প্রায় দুই বিঘারও বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। গাছটির উচ্চতা আনুমানিক ৮০-৯০ ফুট। এর পরিধিও ৩৫ ফুটের কম নয়।

মূল গাছের ৩ দিকে অক্টোপাসের মত মাটি আঁকড়ে ধরেছে ১৯টি মোটা মোটা ডালপালা। বয়সের ভারে গাছের ডালপালাগুলো নুয়ে পড়লেও গাছটির শীর্ষভাগে সবুজের সমারোহ। আমের সময় সবুজ আমে টইটম্বুর থাকে এই গাছটি। আমগুলোর ওজনও হয় প্রতিটি ২০০ গ্রাম থেকে ২৫০ গ্রাম।

স্থানীয়রা জানান, এই আমগাছের ইতিহাস অনেক পুরোনো। মাটি আঁকড়ে থাকা মোটা ডালপালাগুলো দেখে অনেকেই গাছটির বয়স অনুমান করতে চেষ্টা করেন। কেউ সঠিকভাবে গাছটির বয়স বলতে পারছেন না। গাছটি কোন সময় লাগানো হয়েছে তা সঠিক জানা নেই কারও। আমগাছটির আনুমানিক বয়স ধরা হয় ২শ ২০ বছরেও বেশি।

ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের প্রিয় একটি আমের জাত সূর্য্যপুরী। সুস্বাদু, সুগন্ধী, রসালো আর ছোট আঁটি সূর্য্যপুরী আম জাতটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
এই ঐতিহ্যবাহী আমগাছটি জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ৭নং আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী সীমান্তের মন্ডুমালা গ্রামে অবস্থিত। প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে উঠে আজ ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই গাছটি।

রংপুর থেকে আগত তারেক নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘অনেক দিনের আশা ছিল এই আম গাছটিকে দেখার। আজকে সেই স্বপ্ন ও আশা পূরণ হলো। আসলে যতটা মনে করেছিলাম তার থেকেও আম গাছটি অনেক বড় ও সুন্দর। এটি গৌরবের বিষয় যে এশিয়ার বৃহত্তম আম গাছটি আমাদের দেশে।’

পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলা থেকে পরিবারের সদস্য বউ-বাচ্চাকে নিয়ে এসেছেন হাসিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গাছটি দেখে অনেক ভালো লাগলো। তবে এখানে চারপাশে বেড়া বা প্রাচীর দিলে ভালো হতো।’

গাছটি দেখে মুগ্ধ হয়ে লাবনী আক্তার রিয়া নামে এক দর্শনার্থী জানান, ‘গাছটি অনেক বড়। এখানকার পরিবেশটাও অনেক ভালো ও এখানে যদি থাকার ব্যবস্থা থাকতো, তাহলে আমি এখানে থেকেই যেতাম।’

তমিরুল ইসলাম নামে এক দর্শনার্থী জানান, ‘মানুষের মুখে শুনে অধীর আগ্রহ নিয়ে এখানে এসেছি দেখে অনেক ভালো লেগেছে। এখানে যদি খাওয়ার বা থাকার হোটেল-রেষ্টুরেন্ট থাকতো, তাহলে আমাদের মতো অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের জন্য অনেক সুবিধা হতো।’

উত্তরাধিকারসূত্রে গাছটির বর্তমান মালিক নূর ইসলাম আমাদের জানান, গাছটির অনেক বয়স হলেও এখনও প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ মণ আম হয়। যার দাম হয় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। অনেক দূর দূরান্ত থেকে গাছটি দেখতে ছুটে আসেন অনেক মানুষ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পর্যটকদের জন্য কিছু করা যেত কিন্তু এককভাবে করে তা করতে পারছেন না।