ঈশ্বরদীতে ‘অস্ত্র নাটক’: বৈধ বালুবোঝাই ট্রলার বন্ধে ওসি ও পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ

পাবনা জেলা প্রতিনিধি

: পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীতে বৈধ বালু পরিবহনকারী ট্রলার চলাচল বন্ধ করতে একদল সন্ত্রাসী এবং ঈশ্বরদী থানার ওসি ও পুলিশের বিরুদ্ধে ‘অভিনব কায়দায়’ অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে সাধারণ মাঝি ও খেটে খাওয়া কর্মজীবী মানুষের নামে হয়রানিমূলক ও মিথ্যা মামলা দায়েরের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। গত ১১ জুন বেলা ৩টায় ঈশ্বরদীর ইসলামপুর ঘাট ও সাহারা ঘাটে এই ‘নাটক’ মঞ্চস্থ হয়েছে বলে অভিযোগকারী পক্ষ জানিয়েছে, যা ঈশ্বরদী থানার ওসির পরবর্তী কর্মকাণ্ড নিয়ে জনমনে ব্যাপক প্রশ্ন তৈরি করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত ও পুলিশের ভাষ্য:
ঈশ্বরদী পুলিশ কর্মকর্তার প্রাথমিক ভাষ্য অনুযায়ী, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নদীতে অভিযান চালিয়ে একটি বালুবোঝাই ট্রলারকে থামাতে বলা হলে সেটি গন্তব্যের দিকে এগোতে থাকে। এরপর ঈশ্বরদী থানার ওসি স্থানীয় বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টুর ছোট ভাই ও মামলার বাদী মেহেদীর স্পিডবোর্ড ব্যবহার করে দ্রুত নৌকার মাঝিকে গ্রেপ্তার করেন। এরই মধ্যে নৌ পুলিশের ওসিকে খবর দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসতে বলা হয়। পরবর্তীতে আরও দুটি বালুবোঝাই ট্রলারকে গ্রেপ্তার করে ঘাটে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে একটি ট্রলার থেকে একজন লাফ দিয়ে পালিয়ে যায় এবং ট্রলারের ছয়জন শ্রমিককে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে ঈশ্বরদী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেপ্তারকৃত ছয়জনের মধ্যে একজন ছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী।
অভিযোগ: অস্ত্র ও মামলা নিয়ে অসঙ্গতি
অভিযোগ উঠেছে, আসামিদের থানায় নিয়ে যাওয়ার পর নৌ পুলিশের ওসি তার স্পিডবোর্ড ব্যবহার করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে কর্মস্থলে ফিরে যান। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দুটি দেশীয় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টুর ছোটভাই মেহেদী ইঞ্জিনিয়ার কাকনসহ ৩৭ জনের নামে যে মামলা করেন, তাতে কোনো বালু শ্রমিকের নাম ছিল না। অথচ গ্রেপ্তারকৃত ছয়জন বালু শ্রমিকের কাছে গ্রেপ্তারের সময় কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি বলে দাবি করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, তাদের কাছে কোনো অস্ত্র না থাকা সত্ত্বেও ঈশ্বরদী থানার কর্মরত ওসি কীভাবে তাদের অস্ত্র দিয়ে মামলা দেখিয়ে গ্রেপ্তার করলেন? দীর্ঘ কয়েক দিনের অনুসন্ধানে একদল সাংবাদিক জানতে পারে যে, ঈশ্বরদী থানার কর্মরত ওসি এবং ঈশ্বরদীর নৌ পুলিশের কর্মরত ওসির বক্তব্য পরস্পরবিরোধী। ঈশ্বরদী থানার ওসি বলছেন, প্রথমে আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পরে নৌকার মধ্যে অস্ত্র পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, নৌ পুলিশের ওসি জানিয়েছেন, আসামিদের নিয়ে যাওয়ার পরপরই অভিযান শেষ হয়েছে এবং সেখানে কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, আসামিদের থানায় নিয়ে যাওয়ার পরই অভিযান শেষ হয়েছে এবং সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে গেছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই অস্ত্র দুটি কোথা থেকে আসলো?
ঈশ্বরদী থানার কর্মরত ওসি আরও জানান, তিনি আসামি নিয়ে আসার পর তার থানার তিনজন কর্মরত এসআই ও পুলিশ সদস্য সেই স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছিল এবং ট্রলারগুলোর ভেতরে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রগুলো পান। কিন্তু নৌ পুলিশের ওসির কথা অনুযায়ী, সেখানে কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি এবং আসামিদের নিয়ে যাওয়ার পরই অভিযান শেষ হয়ে যায়।

যেখানে নৌ পুলিশের নিজস্ব স্পিডবোর্ড রয়েছে, সেখানে ঈশ্বরদী থানার কর্মরত ওসি কেন মামলার বাদী ও বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টুর ছোটভাই মেহেদীর স্পিডবোর্ড ব্যবহার করলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
যাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে, তারা অতিশয় দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষ। তারা দিন আনে দিন খায়। তাদের পরিবারগুলো বর্তমানে অসহায়ের মতো না খেয়ে দিনযাপন করছে। পরিবারের দাবি, ঈশ্বরদী থানার কর্মরত পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা মামলার নাটক সাজিয়ে বালুবোঝাই ট্রলারগুলো বন্ধ করার উদ্দেশ্যে এবং বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মেহেদী বাহিনীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেহেদী বাহিনীর লোকেরা প্রতি বালুবোঝাই ট্রলার থেকে ২০০০ টাকা করে চাঁদা দাবি করে আসছিল। সেটি না দেওয়ার কারণেই এই মামলার নাটক সাজানো হয়।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এবং
পূর্বের ঘটনা তদন্ত করে দেখা যায়, পাবনা জেলার পুলিশ সুপারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, নদী এবং বালু সংক্রান্ত বিষয় নৌ পুলিশের কাজ। পাবনার জনগণ দাবি করছে, পুলিশ প্রশাসন রক্ষকের কাজ করছে না, বরং ভক্ষকের কাজ করছে অথবা কোনো নির্দিষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনীর হয়ে কাজ করছে। এই ঘটনার পর থেকে পদ্মা নদীতে যত বালুবহনকারী ট্রলার আছে, তা সবগুলোই বন্ধ রয়েছে। মাঝিদের আশঙ্কা, কখন জানি আবার কোনো মামলায় আসামি করে জেলে পাঠায়। মাঝিরা বলছেন, “এজন্য আমরা সবাই নৌযান বন্ধ রেখেছি। আমাদের আর পুলিশের প্রতি কোনো বিশ্বাস নাই, উনারা ইচ্ছা করলে সবকিছুই পারেন।”
এই ঘটনায় প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয় এবং সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্যে কী ঘটে, তা জানতে আগ্রহী স্থানীয় জনগণ।