আদিতমারীতে পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, তদন্ত কমিটি গঠন~

. মো:আহমুদুল হাসান,লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি,বিবিসি নিউজ ২৪ লাইভ।

আদিতমারীতে এসএসসি’র প্রাক নির্বাচনি পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ভাষণ নিয়ে এলাকা জুড়ে তোলপাড়। তদন্ত করতে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার(১ জুলাই) বিকেলে ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) বিধান কান্তি হালদার। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেনকে কমিটির প্রধান করা হয়।

এর আগে সকালে উপজেলার মহিষখোচা বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক নির্বাচনি পরীক্ষার বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্নে এ ভাষণ ব্যবহার হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, উপজেলার বিদ্যালয়গুলোতে
আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রাক নির্বাচনি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মঙ্গলবার ছিল বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের পরীক্ষা। সেখানে সৃজনশীল প্রশ্নের উদ্দীপকে ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। এটি শিক্ষার্থীদের হাতে বিতরন করে পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষা শেষে মহিষখোচা বহু মুখি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একসেট প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) বিধান কান্তি হালদার।

প্রশ্নে পত্রে লেখা হয়, ইউনেস্কো ২০১৭ সালে একটি ভাষণকে ‘বিশ্ব প্রামান্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যার অংশ বিশেষ এমন “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দিবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা “।

প্রশ্নপত্র প্রসঙ্গে মহিষখোচা বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ(ভার) আবুল হোসেন বলেন, আমরা উপজেলা শিক্ষক সমিতির কাছ থেকে প্রশ্নপত্র ক্রয় করে পরীক্ষা নিয়েছি। সমিতি নিজেরা প্রনায়ন না করে বগুড়ার একটি প্রেস থেকে ক্রয় করেছে। এমন সমস্যা শুধু আমার বিদ্যালয়ে নয়, উপজেলার ১০টি বিদ্যালয়ে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। নিজেরা প্রশ্ন প্রনায়ন না করে ক্রয় করা প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া বিধি সম্মত হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

আদিতমারী উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি পদে রয়েছেন সাবেক সমাজকল্যান মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নিকট আত্নীয় কুমড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম কাজল এবং সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন মহিষখোচাে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্পাদক চড়িতাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আ স ম রওশন নবী মোহন। আওয়ামীলীগ পরিবারের লোকজন সমিতির নেতৃত্বে থাকায় প্রশ্নপত্রে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ স্থান পেয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সারা দেশের অধিকাংশ স্থানে আওয়ামী দোসরদের বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে অপসরন করা হলেও উপজেলা শিক্ষক সমিতিতে রয়েছে বহাল তবিয়তে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, কেনা প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার নিয়ম নেই। আমরা বেশ বিছু বিদ্যালয় নিজেস্ব প্রশ্নে পরীক্ষা নিচ্ছি। আওয়ামী দোসররা সমিতির নেতৃত্ব দেয়ায় তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে এমন প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেছেন। তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানান তিনি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সমন্বয়ক(উত্তরাঞ্চল) রাসেল আহমেদ বলেন, আওয়ামী দোসরা আজও ভুল ইতিহাস শিক্ষার্থীদের জানাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এদের প্রতিহত করে আগামী প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। যারা বিকৃত ইতিহাস তুলে ধরে খলনায়কের বক্তব্যে প্রশ্নপত্র প্রনায়ন করে পরীক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি কামরুল ইসলাম কাজল বলেন, সমিতি কোন প্রশ্ন প্রনায়ন করে না এবং করেওনি। যারা বলেছে তারা ভুল বলেছে। আপনি নুরুজ্জামান মন্ত্রীর আত্নীয় কি না? এমন প্রশ্নে তিনি কোন মন্তব্য না করে ফোন কেটে দেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেন বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটি তদন্ত শুরু করেছি। তারা সমিতির ক্রয় করা প্রশ্নে পরীক্ষা নিয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে নিজেস্ব প্রশ্ন ছাড়া পরীক্ষা নেয়ার কোন নিয়ম নেই বলেও জানান তিনি।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) বিধান কান্তি হালদার বলেন, পরীক্ষা শেষে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তাৎক্ষনিক শিক্ষক সমিতির নেতা ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ডেকে নিয়ে আগামী দিনের পরীক্ষার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। সুষ্ঠ তদন্ত করতে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষক সমিতি প্রশ্নটি বগুড়ার একটি প্রেস থেকে ক্রয় করে সরবরাহ করেছে বলে প্রাথমিক ভাবে শোনা যাচ্ছে।